জলধি
/ Translation
/ কুমুদ ঘোষের তিনটি কবিতা
কুমুদ ঘোষের তিনটি কবিতা
1-
ধন্যবাদ মহাশয়, ধন্যবাদ
মূলঃ কুমুদ ঘোষ (অসমীয়া)
বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস
অন্ন, বস্ত্ৰ, বাসস্থানহীন দিনগুলিতে
আপনি আমাদের নাম দিলেন গরিব
কী মনে হল আপনার
হঠাৎ সেদিন শব্দ বদলে
আপনি আমাদের দুঃখী বলে ডাকলেন
তারপরে দরিদ্ৰ. তারপরে নিঃস্ব
শব্দের ভিড়ে শব্দ বদলানো আপনার সখ
মহাশয়, আপনি জানেন কি
নাম বদলালেও আমাদের ক্ষুধা একই থাকে
নাম বদলালেও আমাদের লজ্জা একই থাকে
নাম বদলালেও আমাদের জন্য শীত-গ্ৰীষ্ম একই নামে
শব্দ সাধনার জন্য আপনাকে
ধন্যবাদ জানানো উচিত । আমরা কিন্তু নিরুপায় মহাশয় ।
এই মুহূৰ্তে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবার কোনো প্ৰস্তাব আমাদের নেই
আমরা জানি, আপনি আপনার স্থিতি হারানোর ভয়ে কাতর,
আর আমরা প্ৰাপ্তির লক্ষে সবল প্ৰতিনিয়ত
মহাশয়, ধন্যবাদ বলে কোথা থেকে বলি
ধন্যবাদ বললে আপনি ‘প্ৰতিবাদ’ বোঝেন
হায়, আপনি তো শব্দের খেলোয়াড়
শব্দের সঙ্গে আপনার অন্তহীন কথাবাৰ্তা,
আপনার কথায়-কাজে ফুটে উঠে
আমাদের জীবন এক ‘ওপেন টু বাইস্কোপ’ খেলা
মহাশয়, ক্ষুধাৰ তাড়নায় অন্ন কমে এলেও
আপনি যন্ত্ৰণাকে জীৰ্ণ বলে ভাববেন না
শীত-গ্ৰীষ্মে কাঁপতে থাকলেও
মুক্ত আকাশ কংক্ৰীটে ঢাকব বলে ভাববেন না
আর লজ্জার কথা একেবারে বলবেন না
আপনার কাপড় কমে আসতে দেখে
আমরা মুষ্টিবদ্ধ করেছি হাত
মহাশয় বিনীতভাবেই বলছি
শির নত করুন তো একবার
শির নত করলে আমরা বলব
ধন্যবাদ মহাশয়, ধন্যবাদ ।
ঈশ্বরের সন্ধানে একদিন
মূল : কুমুদ ঘোষ (অসমীয়া)
বাংলা অনুবাদ : বাসুদেব দাস
"সবার উপরে মানুষ সত্য,
তাহার উপরে নাই ।"
- চন্ডীদাস
নামঘরে গেলাম, দরজা বন্ধ
মন্দিরে গেলাম, দরজা বন্ধ
মসজিদে গেলাম, দরজা বন্ধ
গুরুদ্বারে গেলাম, দরজা বন্ধ
গির্জায় গেলাম, দরজা বন্ধ।
তিনি বললেন,
'বাড়ি ফিরে যাও, বাড়িতেই আমাকে পাবে।'
আমি বললাম,'কীভাবে তোমাকে চিনতে পারব?'
তিনি বললেন,'বাড়ির লোকের মুখগুলি দেখ,
প্রতিবেশীর মুখগুলি দেখ,জনগণের মুখ দেখ ।
সেই মুখগুলির মধ্যেই আমাকে খুঁজে পাবে।'
মুখগুলি দেখার সময় ঈশ্বর, আল্লা অথবা গডকে পৃথক পৃথক ভাবে দেখতে পেলাম না,
মানুষের মুখমণ্ডলে জ্বল জ্বল করছিল কেবল মানুষ।
-----------------------
* নামঘর হল অসমের বৈষ্ণবসকলের সামূহিক উপাসনা গৃহ ।
আমেরিকা না চীন ?
------------------------
মূল : কুমুদ ঘোষ (অসমিয়া)
বাংলা অনুবাদ : বাসুদেব দাস
------------------------------
আমেরিকা না চীন ?
চীন না আমেরিকা?
এই কথাগুলি এখন থাক।
বেঁচে থাকলে একদিন জিজ্ঞেস করব
আসলে কে কী রকম?
কাল রাতে স্বপ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসেছিলেন
আর এসেছিলেন জি জিনপিং
আমার সামনে দুজনে করমর্দন করেছিল,
নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আমি কথা-বার্তাগুলি শুনছিলাম ।
লোকের মুখে শুনেছি আমেরিকা ! অন্যের স্বধীনতায় চটকরে হস্তক্ষেপ করা তোমার স্বভাব ?
লোকের মুখে শুনেছি চীন !
ভালো থেকেও ভালোটা নিজের জন্য রেখে,
সস্তা জিনিসের দ্বারা বাজার দখল করা তোমার অভ্যাস?
বল তো বল
আমেরিকা এবং চীন
তোমাদের আমরা কেন করব না ঘৃণা?
তোমাদের ওখানে কিছু একটা হলে
আমাদের এখানে শুরু হয় ধর্মের টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচ।
তোমাদের ওখানে কিছু একটা হলে
আমাদের এখানে জলের দরে বিক্রি হয় মানুষের প্রতিটা দিন।
আমেরিকা না চীন?
চীন না আমেরিকা?
কথাগুলি এখন থাক।
সন্দেহ করা ভালো,
সন্দেহ না করলে কীভাবে জানব
আমেরিকা না চীন ?
অলংকরণঃ তাইফ আদনান