দুর্গা নামের মেয়েটিকে সর্বপ্রথম দেখেছিলাম ডিভিডি ক্যাসেটের সাদাকালো পেপারের প্রচ্ছদে। সেই প্রচ্ছদে ছিল একটি কিশোরী মেয়ে যে কিনা ভগ্ন দেয়ালের ফাঁক দিয়ে কী যেন দেখছে৷ কী দেখছে এই কৌতুহলে আমি প্রথম পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি দেখি।
চলচ্চিত্রটি দেখার পর ভাবি আরে এ তো আমার শৈশবের গল্প। সেখানে সবচেয়ে দাগ কাটার মতো দৃশ্য ছিল অপু দুর্গার ট্রেন দেখার দৃশ্য। আমার জীবনের প্রথম স্বপ্ন ছিল ট্রেনে চড়ে খালার বাড়ি যাওয়া। কিন্তু যাওয়া আর হয়ে ওঠে না। তখন ট্রেনের লাইনে কান পেতে ট্রেন আসছে কিনা তারজন্য লাইনে কান পেতে থাকতাম। আহা ট্রেন আসার সেই পরীক্ষানিরীক্ষার কথা কীভাবে ভুলি? আমিও বহুবার অপু দুর্গার মতো দৌড়ে ট্রেন দেখতে গেছি। সেই দৃশ্যের সাথে আমার জীবনের গল্পগুলো মিলিয়ে দেখলে বুঝতে পারি , সবার ভেতরে গোপনে পথের পাঁচালির গল্প ঢুকে আছে৷
আমি দুর্গার মৃত্যুর কথা বলব না। তার মৃত্যু নিয়ে অনেকে অনেক রকম ভাবে বলে গেছে৷ এই লেখা একান্তই আমার মনের দিক থেকে উঠে আসা সামান্য কথা। তবে চলচ্চিত্রে আমার প্রিয় নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম পথের পাঁচালীর দুর্গা। চলচ্চিত্রটি যখন দেখি তখন দুর্গার সংক্ষিপ্ত, অবহেলিত জীবন আমাকে প্রভাবিত করেছিল। তার একা একা টিপ পরার বিখ্যাত সেই দৃশ্যটি দেখে আমি আমার নিঃসঙ্গতার সাথে সহজেই মিলিয়ে নিতে পেরেছিলাম। অবাক করার বিষয় যেটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল বা এখনো করে তা হলো দুর্গার নাকের সাদা পাথরের নাকফুল। অবিকল দুর্গার নাকফুলের মতো আমার মায়ের নাকফুল ছিল।
আমি কখনও ভাবতে পারিনি দুর্গাকে নিয়ে এরকম কিছু লিখব। আমি চাই আমার প্রিয় ও পছন্দের মানুষগুলো আজীবন বেঁচে থাক। কিন্তু মহান রবের সত্য দান মৃত্যুকে তো মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না। শ্রদ্ধা জানবেন। প্রিয় উমা দাশগুপ্ত। লাভিউ।
অলংকরণঃ তাইফ আদনান