জলধি / প্রবন্ধ / গীতাঞ্জলি: আমার নিভৃততম আমি
Share:
গীতাঞ্জলি: আমার নিভৃততম আমি

নিয়ত অ-সুরের খিটিমিটি, প্রতিদিনের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, একের পর এক ক্লান্তি-বিরক্তির অভিঘাতে এলোমেলো জীবন। জগতের লাভ-অলাভ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ভারসাম্যের বেশিরভাগ হিসেবপত্রই মেলে না। আমিও যখন আর আমার মধ্যে কুলিয়ে উঠতে পারি না, গীতাঞ্জলি একান্ত আশ্রয় হয়ে  সংসারের নিত্য অসামঞ্জস্যগুলোকে আড়াল করে দেয়। সুন্দরের সেই সামঞ্জস্যে নিজের কাছে ফিরে এলে মনে পড়ে- জগতে আনন্দযজ্ঞে আমারও নিমন্ত্রণ ছিল।                     

এই সত্য ভুলে ছিলাম তাই অশ্রুত থেকে গেছে প্রবহমান জীবনের নীরব জয়ধ্বনি। যেমন করে আজ আকাশ গাইলেও শোনা যায় না। জীবনের জয়ধ্বনিটুকু শ্রুতিসীমায় ধরা দেয় না। তখন নিরাময় খুঁজে পাই গীতাঞ্জলির পাতায়। গীতাঞ্জলির গান সমস্ত কোলাহল মুছে মনে সমভাব এনে দেয়। সেই মাহেন্দ্রক্ষনে অনুভব করি- আত্মনিবেদনের ধীরতা এলো। মনের ভেতর মনের আরেকটি স্তরে নেমে কন্ঠে গুনগুনিয়ে ওঠে শতাব্দীপ্রাচীন গান- আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/পরানসখা বন্ধু হে আমার... টের পাই আমার বদ্ধঘরে বিস্তীর্ণ দিগন্ত নেমে এলো। খোলা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে আমি। ঝড়ের রাতের সেই অলৌকিক যাত্রায় সমস্ত তিক্ততা মলিনতা ধুয়ে সরলতায় পূর্ণ।

‘আকাশ কাঁদে হতাশ-সম,/ নাই যে ঘুম নয়নে মম,/ দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম, চাই যে বারে বার। The sky groans like one in despair,/ I have no sleep tonight,/ Ever and again I open my door/ and I look out on the darkness, my friend!’ আমি আর আগের আমি থাকি না। লুপ্ত ‘আমি’র ভেতর থেকে জন্মায় অন্য-আমি। সে নির্ভার। জীবনের ক্ষোভ গ্লানি অপমানের তীব্রতা হ্রাস করে অনেকটাই লঘু। গভীরতর, গাঢ়তর। জগতের ভান-ভনিতা, দৈনন্দিন অন্তঃসারশূন্যতা থেকে সরে এক নিঃসীম আকাঙ্ক্ষার মুখোমুখি। গভীর অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। গহন বনের ধারে সুদূর কোন নদী পার হয়ে তুমি আসছ। বুকের মধ্যে কী যেন একটা ঘনিয়ে ওঠে। এই ‘তুমি’ আসলে কে? ঘনআঁধারে পথবিস্মৃত অভিসারী সেই তুমি কি আসলে ‘আমি’ই?  আমি যেন কোথায়, কার কাছে যাব বলে অজস্র সহস্র কাল ধরে নদী পেরিয়ে যাচ্ছি। এই শ্বাশত সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত মিথ্যে ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে। সত্য সেটাই যা দেখতে পাই, ছুঁতে পারি। যা আমাকে ছুঁতে পারে। বিষয়বাসনা বন্ধন থেকে ছাড়িয়ে প্রাণকে যা মুক্তি দেয়। আমাকে প্রতিষ্ঠা করে আমার ভেতরে। ‘তুমি’বোধ ‘আমি’তে আত্মস্থ হয়ে সম্পূর্নতার অনুভব সৃষ্টি করে। ফের জীবনের অর্থ খুঁজে পাই। অন্তরতর’র গভীর স্পর্শে আমার চেতনা আমার বেদনা জেগে ওঠে।

‘ছিন্ন পত্রাবলী’র এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- ‘ভিতরে ভিতরে কী যেন সৃজিত হয়ে উঠছে- কত অনির্দিষ্ট আশা, কত রকমের সৃষ্টি, কত রকমের প্রলয়, কত স্বর্গ নরক, কত বিশ্বাস সন্দেহ, কত লোকাতীত, প্রত্যাক্ষাতীত, প্রমাণানীত অনুভব এবং অনুমান, সৌন্দর্যের অপার রহস্য, প্রেমের অতল অতৃপ্তি- মানবমনের জড়িত জটিল সহস্র রকমের অপূর্ব অপরিমেয় ব্যাপার।’ এ গোপন মহারহস্যের অনুভবে আত্ম-আবরণ ঘুচে যায়। বিশ্ব পরিধির মাঝে আমার নিভৃততম আমি সঞ্চারিত হয়। এ যেন আমারই বলা কথা- ‘My eyes have seen and my ears have heard.’ ঘুমিয়ে থাকা মরমীসত্তা জেগে ওঠে। শঙ্খ ঘোষের কবিতায় যেমন ‘অন্ধ চোখ থেকে বধির কানে ছোটে যে বিদ্যুৎ’, সে বিদ্যুৎ হয়তো সাংগীতিক সুষমা। তাই স্পেন্ডারের কবিতায় ‘Central I’ কে ‘আত্মগত আমি’ নাম দিয়ে শঙ্খ ঘোষ বলেছেন- ‘ব্যক্তিগত আমি থেকেই বিন্দু বিন্দু নির্যাস পেয়ে তৈরি হয়ে ওঠে কারো আত্মগত আমি।’ সেই আত্মগত আমি ভিতরদুয়ারের কপাট খুলে বিশ্বলোকে খুঁজে ফেরে পরমাত্মাকে।

কিন্তু কেমন করে ভেদ করি কুহেলিকা সত্যের অমৃতরূপ? গীতাঞ্জলির পাতায় পাতায় প্রাণের কান্না হাসি অনুভবের জন্য নিবিষ্ট পাঠক হতে হয়। সেই একাগ্র পাঠক ছাপার কালো অক্ষরের পাশে সাদা শূন্যতাকে পাঠ করতে জানে। স্বীকার করে নিই ঐশ্বরিকবোধ ছাড়া গীতাঞ্জলির গভীরে যাওয়া কঠিন। তবে এটাও ঠিক যে, শুধু আধাত্ম্যবাদ বা ধর্মীয় পরিমণ্ডল থেকেই নয়, ব্যক্তিগত ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হয়েও এতে আবিষ্ট হওয়া যায়। পরাণসখা, নাথ, প্রভু শব্দগুলো সেখানে সর্বাত্মময় কোনো মহান সত্তার সাথে মিশে যাবার প্রার্থনা বা ক্রন্দন হয়ে ওঠে। এই অনুভবের জন্য ধর্মভাবুকতার দরকার নেই। ‘মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে,/ আঁধার করে আসে,/ আমায় কেন বসিয়ে রাখ/ একা দ্বারের পাশে... Clouds heap upon clouds and it darkens/ Ah, love, why dost thou let me wait/outside at the door alone?’ এই গানে সংবেদী মানুষের কাছে প্রেম আর প্রকৃতির অনুভব মিলনাকাঙ্খায় বিলীন হয়ে যায়। মেঘলা আকাশের অপার রহস্যের আবছায়া, চারদিকের সমস্ত প্রান্তরে আঁধার নেমে আসা। মেঘআঁধারের সেই নিবিষ্টক্ষণ অনুভূতির অগম্য নয়।  ধর্মের পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ তখন জগতের শ্বাশত রূপের দিকে তাকায়। কোথায়  আমি যেন কিসের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে- এ যেন নিজের কাছেই জিজ্ঞাস্য হয়ে ওঠে। এ প্রশ্নের উত্তর পেলাম আবু সয়ীদ আইয়ুবের লোকোত্তর সত্তাপ্রবাহের অনুভবে- ‘গীতাঞ্জলি পড়বার সময় সবিস্ময়ে অনুভব করি আমরা যেন দুই জগতের মধ্যবর্তী সীমান্তরেখা ধরে হাঁটছি, একটু এদিকে সরলে পা পড়ে মর্তলোকের মাটিতে, একটু ওদিকে সরলে বাতাসে পাই অমৃতলোকের গন্ধ।’ নান্দনিক অনুভূতির এ এক স্পষ্টতর সত্যরূপ। প্রিয় ও প্রকৃতির সান্নিধ্যের চেয়েও যা সূক্ষ্মতর ও পূর্ণতর।   

পাঠকের মনে হয়তো এরই মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে বাংলার সাথে ইংরেজি অনুবাদ কেন? দুটো কারণে ইংরেজি অংশগুলো উল্লেখ করেছি। প্রথমত গীতাঞ্জলির অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের স্বকৃত। যার ফলে রবীন্দ্রনাথ অনূদিত কবিতার স্বাদ আস্বাদনের উপযোগ রয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন- ‘রবীন্দ্রনাথকৃত ইংরেজি গীতাঞ্জলির এক ধরণের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ আছে- রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর আমরা এতে শুনতে পাই। শুধু এই কারণেই, অন্যকৃত আধুনিক অনুবাদ ভাষার দিক দিয়ে এবং কাব্য সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে যদি রবীন্দ্রনাথের অনুবাদকে ছাড়িয়েও যায়, তবু আমাদের বার বার করে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির কাছেই ফিরে আসতে হবে।’ শত বছর আগে ইয়েটস বইটির ভূমিকায় লিখে গেছেন তাঁর সমাচ্ছন্নতার কথা- ‘I have carried the manuscript of these translation about with me for days, reading it in railway trains, or on the top of omnibuses and in restaurants, and I have often had to close it lest some stranger would see how much it moved me. These lyrics- which are in the original, my Indians tell me, full of subtlety of rhythm, of untranslatable delicacies of color, of metrical invention- display in their thought a world that I have dreamed of all my life long…’ রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি অনুবাদেও প্রার্থনাগীতির নিবেদন পায় গীতাঞ্জলি। তাই স্তবগানের মন্ত্রতা অনুভব করেন ইয়েটস। ইংরেজি অনুবাদকেও মূল বলে মনে হয় কবিতার সেই আশ্চর্য ভাবানুভুতির জন্য। হয়তো সেজন্যই গীতাঞ্জলির একটি কবিতার চারটি চরণ ইংরেজি অনুবাদে হয়ে গেছে দুটি চরণ। স্পেসের সাথে সাথে বদলে গেছে বিরাম চিহ্নও। ‘যাবার দিনে এই কথাটি’ কবিতার অনুবাদে এই বদলে যাওয়াটুকুর দেখা মেলে।      

এই কবিতা প্রসঙ্গে মনে পড়ে কবি উইলফ্রেড আওয়েন এর কথা। বুকপকেটে তাঁর ছিল এক নোটবই। নোটবইতে কবিতাটির দুটি চরণ লিখে রেখেছিলেন- যাবার দিনে এই কথাটি/ বলে যেন যাই- যা দেখেছি যা পেয়েছি/ তুলনা তার নাই...  When I go from hence let this be my parting word,/ that what I have seen is  unsurpassable…  বলে যেতে চাই এ জগতের পদ্ম পাপড়ি মেলছে। আমি তার লুকিয়ে রাখা মধু পান করেছি। দুচোখ মেলে দেখেছি আলোর মহাসাগরে এক অপরূপ! জগতরূপের খেলাঘরে আমি তাকে দেখে ফেলেছি। তাই স্পর্শাতীত স্পর্শে দেহমনে আশ্চর্য শিহরণ। ‘এইখানে শেষ করেন যদি/ শেষ করে দিন তাই-/ যাবার বেলা এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই। And if the end comes here, let it come-/ let this be my parting word.’ এখানেই যদি শেষ আসে, তবে শেষ হোক! গীতাঞ্জলির এই কবিতাটি বুকে নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সে প্রাণ দিয়েছিলেন ইংরেজ কবি আওয়েন। পঁচিশ বছর বয়সে। নোটবইটা ফিরে গিয়েছিল তাঁর মায়ের কাছে। কবিতার নিচে রবীন্দ্রনাথের নাম লেখা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছিলেন কবি আওয়েনের মা। যুদ্ধে যাবার আগে মায়ের কাছে বিদায় নেবার সময় কবিতার ছত্রটি বলেছিল আওয়েন। দুজনের সামনে তখন রোদে ঝলমল করছে সাগর। সাগরের ওপারে ফ্রান্স। মা আর ছেলে সেদিকে তাকিয়ে। চিঠিতে আওয়েনের মা জানতে চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ কবিতাটি কোন বইতে আছে। এমন কবিতা পড়তে পড়তে এক ব্যাখ্যাতীত বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় মন। আওয়েন নিজের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে মনে রেখেই হয়তো কবিতার দুটো লাইন টুকে রেখেছিলেন নোটবইতে। অথচ পুরো কবিতায় কী শান্তভাবেই না পরমতৃপ্তির ধারা বইছে। বিশাল বিস্তৃত প্রকৃতি থেকে বিদায় নেবার আগে এ কবিতা যেন ভুবন জুড়ে কৃতজ্ঞতার আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে।  আমি পড়ছি আর আমার অনুভবে পৃথিবীর দুপ্রান্তে দুটি কবিমন মিলে যাচ্ছে অলৌকিক সংযোগে।         

গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ পাঠের দ্বিতীয় কারণ এটি একটি বিশেষ সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। ইংরেজী তর্জমায় রবীন্দ্রনাথ পাঠককে অনেকটুকু এগিয়ে দিয়েছেন। আগেই বলেছি গীতাঞ্জলির কালো অক্ষরের পাশে সাদা শূন্যতাকে পাঠোপলব্ধিতে নেয়ার কথা। অনুবাদের সূত্র ধরে অচেনাকে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা সম্ভব। ‘কোলাহল তো বারণ হল’- দেখে নিই এই গান কী বলে।

‘কোলাহল তো বারণ হল/ এবার কথা কানে কানে।/এখন হবে প্রাণের আলাপ/ কেবলমাত্র গানে গানে।’ মনে প্রশ্ন জাগে এই বারণটা করল কে? আমার মন? নাকি বাইরের কোনো কর্তৃপক্ষ? মহাজন? প্রাণের আলাপ যে গানটির মতো হবে সেটিই বা কেমন গান? গীতাঞ্জলিতেই আছে ‘বজ্রে  তোমার বাঁশি বাজে, সে কি সহজ গান?’ এটা কি সেই বজ্রের শঙ্কা-অশান্তির ভেতর শান্তি খুঁজে পেতে চাওয়া গান? উত্তর পাওয়া তো সহজ নয়। পুরোটা পড়লে অবচেতনে একটা ঈঙ্গিত পাওয়া যায়। ইংরেজিতে চোখ বুলিয়ে গেলে দেখব সচেতনভাবে রবীন্দ্রনাথ বলে দিয়েছেন- ‘No more noisy, loud words from me-/such is my master’s will. Henceforth I deal in whispers./ The speech of my heart will be/ carried on in murmurings of a song.’ বোধোন্মেষে পাঠক অনুভব করে ‘Master’s will’। প্রভুর ইচ্ছেয় হৃদয়ে যে গান উদ্ভাসিত, সে গান শব্দের বাইরে অনুচ্চারিত কিছু। তাই ‘গানে গানে’ লিখলেও তর্জমায় কবি বলে দেন ‘Murmurings of a song’। সুরের গুনগুনানিতে হৃদয়ের আলাপ।   

আজি ঝড়ের রাতে গানটির কথা এখানে আরেকবার মনে করা যাক। ঘুমহীন চোখ দুয়ার খুলে বার বার শুধু অন্ধকারই দেখছে। শেষ চরণে ‘গভীর কোন অন্ধকারে/ হতেছ তুমি পার/ পরানসখা বন্ধু হে আমার’ এর অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- through what mazy depth of gloom art thou/  threading thy course to come to me, my friend? ঝড়ের রাত তাহলে শেষ পর্যন্ত অন্তর্গত নিরাশা আর বিষণ্ণতার গভীর বিভ্রম। অনন্ত বিরহবেদনার বিষাদ পাড়ি দিয়ে অভিসারী তুমি আমার কাছেই আসছ। শুধু আসছ বললে সেটা আংশিক বলা হলো। আসলে আসার পথ করে নিচ্ছো। এ কথাটা মূল কবিতায় অনুক্ত। তর্জমায় থেকে গেছে।   

গীতাঞ্জলি পাঠ এক নিরন্তর আত্মনির্মাণ প্রয়াস। আত্মসন্ধানও। ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়’ গীতাঞ্জলি বলে দেয়- ‘করুণা ধারায় এসো/ সকল মাধুরী লুকায়ে যায় গীতসুধা রসে এসো... ওহে পবিত্র, ওহে অনিদ্র রুদ্র আলোকে এসো... When the heart is hard and parched up, come upon me/ with a shower of mercy/ when grace is lost from life, come with a burst of song... O thou holy one, thou wakeful, come with thy light and thy thunder.’    

আত্মগত জীবন ও বিশ্বজগতের সাথে প্রগাঢ় যুক্ততা গীতাঞ্জলির মূল নির্যাস। এই নির্যাসই পরম। ফুরিয়ে গিয়েও বার বার পূর্ণতায় ফিরে আসি পরমে আত্মনিবেদন করে। জীবনের অসীম দানে শূন্য মুঠো ভরে নিতে শিখি। পরমের আশ্বাসে আর লীলায় অশেষ হয়ে উঠি। ‘Thou hast made me endless, such is thy pleasure./ This frail vessel thou emptiest again and again,/ fillest it ever with fresh life…’ এ গান বিহ্বল আত্মব্যাকুলতায় গহন কেন্দ্রের দিকে টেনে নেয়। আবার এ গানেই আছে মুক্তির আশায় আত্মবোধের কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার আশ্চর্য কাতরতা। আমি থেকে সমস্তটায় মিলে যাবার আকুতি।  

গীতাঞ্জলি তাই সময়ের ব্যবধান উড়িয়ে চিরকালীন। ভালোবাসার মতোই নিজস্ব সত্তায় স্থির থেকে বিশ্বপরিধিতে সঞ্চারমাণ। অপূর্ণ থেকে পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষায় কেন্দ্র আর পরিধি জুড়ে সমস্ত জগতের।



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন