যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এইটা একটা চমৎকার স্যাটায়ার ফিল্ম, অথচ গোটা সিনেমায় একটা গোলার আওয়াজ আপনি পাবেন না। তবুও আপনাকে বিষণ্ণ করবে, আপনাকে হাসাবে, বিদ্রুপের হাসি। ঠিক যুদ্ধ না যখন যুদ্ধশেষে শান্তি আলোচনা চলছে সেই সময়ের গল্প এবং লক্ষ করা গেল মহৎ সিনেমাগুলো আসলে সরল গল্পের ডালপালা, এখানে যেমন আমরা টের পেলাম না যুদ্ধটা আসলে কোন দুই পক্ষের মধ্যে ছিল, একটুখানি আঁচ পাওয়া যায় যে বলকান অঞ্চলের কোথাও ঘটেছে এই দুর্ঘটনা, আর কেবল জানলাম নিকোলা নামের বালকটির বাবা-মা যে দড়িতে ঝুলছে সেই খবর এখনো তাকে দেয়া হয়নি, তার দাদা জানাইল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তাকে জানানো হবে, নিকোলা জানে তারা নিরাপদে আছে, যুদ্ধ শেষ হলেই ফিরে আসবে! এই ঘটনার মুখোমুখি হবার আগেই আমরা জানতে পারি নিকোলার বাবার অ্যাবসার্ড চরিত্র, শোনা যাক নিকোলার মুখ থেকেই, Tajsone crazy dog. One day he bite my father. But my father more crazy than Tajsone. He bite Tajsone back and since then Tajsone respect him. He says what you do to me I do to you! এরপরে টাইসন নামের কুকুরটা আর কখনো তার বাবাকে কামড়ানোর দুঃসাহস দেখায়নি! নিকোলা যার কাছে গল্পটা করছিল সেই মামব্রু হলেন কোনো এক সাহায্যকারী সংস্থার প্রধানকর্মী, যিনি এখানে নিযুক্ত হইছেন আপদকালীন পরিস্থিতিতে স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানিপ্রাপ্তিতে সৃষ্ট জটিলতা থেকে স্থানীয় জনগণকে রিলিফ দিতে, স্পেসিফিকালি ছবিটা শুরু হয় একটা কুয়া থেকে একটা লাশ উদ্ধারের অভিযান দিয়ে। কারা যেন একজনকে মেরে ফেলে গেছে এইখানে। ফলে ঐ এলাকার মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিছে, তা ঐ লাশ উঠাতে গিয়ে দড়ি গেল ছিড়ে, এখান থেকেই উদ্ভট পরিস্থিতির যাত্রা, এক টুকরো দড়ি কোথাও মিলছে না, হাস্যকর সব জটিলতা, যে এলাকায় এসব কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে সেই এলাকার মানুষের রসবোধ খুব প্রখর, এর মধ্যে নিকোলার বাপের কারবারের সাথে তো পরিচিত হইলেন, আরেকটা ঘটনা শেয়ার করা যাক, দড়ি মিলছে না দেখে নিকোলা কইল তাদের বাড়ির কাছে দড়ি আছে, মামব্রু টিম সহ সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে দেখে দড়ি দিয়ে বান্ধা ভয়ঙ্কর এক কুকুর, মামব্রু নিকোলার পানে চাইয়া জিগাইল দড়ির এক মাথায় যে কুকুর বান্ধা আছে এইটা তো কও নাই, নিকোলা কইল, তুমি দড়ির কথা জিগাইছো আমি সন্ধান দিছি, দড়ি যে আছে সেটা তো মিথ্যা না! যাই হোক এই দড়িতেও শেষ রক্ষা হয় না, বাধ সাধলেন ইউএন টিম। লাশে মাইন সেট করা থাকতে পারে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তারা প্রোটোকল মাইনা লাশ তুলতে দিতে নারাজ! কী এক আজব পরিস্থিতি, তাই না? এসব সিনেমার শক্তিশালী দিক হলো সংলাপ, যা আপনাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে ক্লান্তিহীন। ২০১৫ সালের কান ফিল্ম ফেস্টের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট সেকশনে প্রদর্শিত হয় ছবিটি, ৩০-তম গয়া ফিল্ম ফেস্টে ৯ টি বিভাগে নমিনেশন পেয়ে বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে'র পুরস্কার জিতে নেয়। স্পেনের পরিচালক, ফার্নান্দো লিওন ডি আরানোয়ার অধিকাংশ কাজই মানসম্পন্ন। ছবিতে আছেম 'বেনিসিও ডেল তরো', টিম রবিন্সের মতো কুশলী অভিনেতাগণ, ছবির শেষটাও কী চমৎকার, বৃষ্টিভেজা একটা দিনে সব চরিত্রগুলো একটু একটু করে ছুঁয়ে যাওয়া। এই ছবির স্বাদ আপনার চোখেমুখে লেগে থাকবে অনেকদিন, এই ভরসাটুকু দিলাম, দেখুন বিসমিল্লাহর সানাই মনে করে চেটেপুটে নিতে পারেন কিনা!
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন