সময়, বিকেল বেলা। বটতলার মোড়ের একমাত্র ঔষধের দোকানে বেশ ভিড়। ফজলু তার শেফা ফার্মেসীর সামনে দাঁড়ানো লোকজনদের নাপা-জিংক-হিসটাসিন ইত্যাদি দিতে দিতে এনায়েতের দিকে চায়— এনায়েত ভাই,আপনের কি লাগবে কন তো? এনায়েত মুচকি হেসে মাথা নাড়ে— ব্যস্ত হইস না। সবাইরে দিয়া ল আগে, তারপর আমারটা লমু নে। তারপরও ফজলু এলাকার এনায়েত ভাইয়ের জন্য ব্যস্ত হয়— আপনে কি যে কন ভাই ! এই সময় কি ঔষধের দোকনের ভিড় হালকা হয়? কালকেও আপনে লোকজনের ভিড় দেইখ্যা চইলা গেলেন গা ! ফজলুর বকবকানিতে কান না দিয়ে এনায়েত মুখের মাক্সটা খুলে একটা সিগারেট ধরায় । সিগারেট হাতে নিয়ে সামান্য দূরে রাখা নিজের বাইকটাতে গিয়ে বসে ‘পরে। সকলের সাথে ঔষধের দোকানে ভিড় বাড়ানোর দরকার হয় না। তাছাড়া সে যা কিনতে আসছে, সেটা পরিচিত জনের সামনে নেওয়াও যায় না !
মটরসাইকেলে আরাম করে বসে সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে এনায়েত ভাবতে থাকে— এই দুঃসময়ে গোটা দুনিয়ার মানুষের যখন খাবি খাওয়ার দশা, তখনও তার কপালটা তেমন মন্দ নয়। ভাগ্যিস গত বছরের শেষ নাগাদ সে টিসিবি’র ডিলারশিপটা পেয়েছিল। আর এখন এপ্রিল-মে, সামনে বাজেট,তার উপর করোনার আতঙ্ক। এলাকার লোকজনও তার কাছে ধরা। এই সুযোগে সে দুহাতে কামাচ্ছে। কামাও মনু,ধুমসে কামাও— এনায়েত নিজেকেই যেন প্রণোদন দিতে থাকে ।
গভীর তৃপ্তিতে বটতলার শেষ মাথায় তাদের দোকানটার সামনে চাল-ডালের অপেক্ষায় লাইন দিয়ে দাঁড়ানো লোকজনদের দেখতে থাকে এনায়েত। সেই কবে তার বাপ ফারুক মুন্সি যৌতুকের বদলে শ্বশুর বাড়ি থেকে জোর করে ধরে আনা গাই-গরু বিক্রি করে দোকানটা দিয়েছিল। ভাগ্যিস দিয়েছিল! তা না হলে এই দুর্দিনে কি যে হতো ! কিন্তু বাপে এত বছর দোকানদারি করলেও কোন উন্নতি করতে পারে নাই ; মাঝখান থেকে লোকে তারে গরু-চোর নামটা দিয়ে দিল ! ছোটবেলায় শুনেছে শুনেছে কিন্তু লোকজন যে এখনও তারে আড়ালে আবডালে গরু-চোরের ব্যাটা বলে ডাকে,সেটা এনায়েত বেশ ভাল করেই জানে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সে শুনে আসছে গরুচোরের পোলা, গরুচোরের পোলা! ছোট বেলায় এ নিয়া সে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়শই মারামারি বাধাত কিন্তু কোন কাজ হয় নাই। এলাকার পোলাপানরা ছিল বড়ই হারামি...তারে সুযোগ পেলেই গরুচোরের ব্যাটা বলে ডাকতো । এ নিয়ে এনায়েতের দুঃখের অন্ত ছিল না। এদের জ্বালায় সে এলাকার স্কুলে পর্যন্ত পড়তে পারে নাই !
সে এতদিন পর সব শালারে বাগে পেয়েছে। লোকজন যখন চিন্তাক্লিষ্ট মুখে বলতে থাকে— বাবা এনায়েত, তোমাগের চাউল-ডাউলের টেরাক কবে আসবে বাবা? তখন অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে হাসি মুখে সে উত্তর দেয়— এই দু’একদিনের মধ্যে আসবে চাচা। কিন্তু মনে মনে হিসহিস করে এনায়েত— নটির পুতেরা,এখন তো এই গরুচোর ফারুক মুন্সির পোলার কাছেই তোদের হাত পাত্তে হচ্ছে । এখন ‘ক না চোরের ব্যাটা, শালা নেমক হারামীর দল। এনায়েতও কম যায় না ! স্টকে ঘাটতি দেখায়, নিজের বিশ্বস্ত লোক মারফত এই শালাদের কাছেই চড়া দামে বিক্রি করে। নে শালারা, তোদের জন্যি এই পুরুস্কার !
গত কয়েক মাসে ধুমসে কামিয়েছে এনায়েত। মটরসাইকেল নিয়ে টাউনে যাও,মালামাল নেও, চালান কাটো, ভাগের টাকা জায়গা মত পৌঁছাও, সিন্ডিকেটের লোকজনের সঙ্গে দেখা করো, হাজারও কাজ—সময়টা ভালোই কাটছিল তার। কিন্তু করোনা বাড়তে থাকায় আগের মতো আর ঘোরাফিরা করা হয় না,ফুর্তিটুর্তি তো দূরের কথা। কেমন যেনো বন্দি হয়ে যেতে হচ্ছে । যদিও টাকা কামানি থেমে নেই তার। একবার লাইন ইজি হলে টাকা আসতে আর সমস্যা হয় না, তা যত ঝামেলাই হোক।
নাহ্ ! আজকেও ফজলুর দোকানের ভিড় কমবে না । ফজলুকে পরে আসার ইশারা দিয়ে এনায়েত মটরসাইকেল স্ট্রাট দেয় । নিজেদের দোকানে যাওয়ার আগে মোক্তারপাড়া থেকে ঘুরে আসার কথা ভাবতে থাকে এনায়েত। ইদানিং মোক্তারপাড়ায় তার যাওয়া-আসাটা ঘনঘনই হচ্ছে। না গিয়ে সে থাকেই বা কেমনে ! মাস দুয়েক আগে ফারজানা তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা একস্পেট করেই না তারে উথালপাতাল করে দিয়েছে । এই মেয়েটার পিছে সে কম ঘুরেছে ! রাত কি দিন সব একাকার করে ফেলেছিল । ফারজানার পিছে ঘুরতে ঘুরতেই না হতাশ হয়ে এক সময় সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছিল। অবশ্য একটা পর্যায়ে ফারজানাকে সব সময়ে চোখের সামনেও পাওয়া হচ্ছিল না। লতিফ উকিল ভাব চেগায় তার মেয়েরে টাউনের কলেজে ভর্তি করেছিল। তাই ছুটিছাটা ছাড়া মেয়েটাকে আর এলাকায় দেখা যেত না। কিন্তু এখন উপায় নাই, করোনাকাল ! তার উপর কলেজ বন্ধ। উকিল তাই মেয়েকে বাড়িতে এনেছে।ফলে এনায়েতেরও কপাল খুলে গেল । ফারজানা তার কাছে একপ্রকার জেদের মতো, না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই ! অবশ্য মাসখানেক হলো মেয়েটার সঙ্গে দূরত্ব তার কমেছে। দেখাসাক্ষাতও হয়েছে বেশ কয়েকবার। টাউনে পড়তে যাওয়ায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। মেয়েটার জড়তা কমেছে । পোলাপানরে এখন সে ভালই খেলাতে পারে। অবশ্য এই মাছধরাধরির খেলা এনায়েতের খারাপ লাগছে না। অন্য মেয়েগুলো যেন কেমন ছিল,শুরু থেকেই মাখোমাখো ! তাই এনায়েতেরও বেশি দিন আগ্রহ থাকতো না। এনায়েত ভাবে—
ফারজানা তারে যেমনে ভাজতাছে, সে পুরাই চনচনা ! কাছে আসে, তয় ধরা দিব দিব কইরাও ধরা দেয় না। এনায়েতের খারাপ লাগে না ব্যাপারটা, আমুদই লাগে ! কেমুন যেন দামি নেশায় পাওয়ার মতো... বহুক্ষণ তাকায় থাকতে মন চায় । খাইলেই তো শ্যাষ ! তাই প্রতিবার ফারজানার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে এনায়েত মনে মনে আওড়ায়—
“তোমারে পাইতে কষ্ট হইতাছে ইউক,
আমি অনেক কিছু ছাইড়া আসা লোক”
ঐ তো ফারজানা...! এনায়েত মটরসাইকেলের পিকআপ বাড়িয়ে দেয়। কালিবাড়ি পার হয়ে বড় কদমগাছটার ডানদিক ঘেঁষে যে ছোটরাস্তাটা মোক্তারপাড়ায় ঢুকেছে, তার মাঝখানের ছোট পুলটায় দাঁড়িয়ে ফারজানা মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে । এনায়েত একটানে মোটরসাইকেল সমেত পুলের মাঝ বরাবর । ফারজানা কিছু বলার আগেই এনায়েতের বাকবাকুম স্বর—
— এই যে পাখি ! কি করতাছ তুমি?
— ক্যান চোখে দ্যাখেন না বুঝি ! আর কি সব পাখি-টাখি ডাকা শুরু করছেন আপনি?
— তুমি তো আমার কাছে পাখির মতোই। কখন না জানি ফুরুত কইরা আবার টাউনে উইড়া যাও গা !
— যে অবস্থা চলছে ! আর টাউনে যাওয়া !
— ক্যান কি হইছে? গ্রাম কি তোমার ভালো লাগতাছে না?
—আমার এক জিনিস বেশিদিন ভালো লাগে না।
— এইটা তুমি কি কইলা ! নিজের গ্রাম, আশেপাশে সব চেনা মানুষ।
— তারপরও...!
— তার মানে আমারেও তোমার ভালো লাগে না,কও ?
— আরে, কি যে সব আবোল তাবোল কথা আপনার !
— তাইলে সমস্যা কি?
— এই রকম আর বন্দি থাকতে ভালো লাগছে না। টাউনে থাকতে কত ঘোরাঘুরি করতাম। আর এখন...!
একটা হতাশা মিশ্রিত শ্বাস বের হয় ফারজানার ভেতর থেকে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অতি উৎসাহে এনায়েত বলতে থাকে—
— তাইলে তুমি আমার বাইকের পিছে বও। আমি একটানে তোমারে নদীর পাড় থাইকা ঘুরায় নিয়ে আসি।
— হ্যাঁ, আপনার সাথে ঘুরি আর লোকজন দেখুক ! সাথে সাথে আব্বা আমারে ঘরবন্দি করে রাখবে । এমনিতেই আব্বা ইদানিং বাড়ির বাইরে আসতে দিতে চায় না।
— বাপের কথা বইলা পিছলাইও না, বুজছো !ওসব আমি জানি। আসল কথা হইল তোমার সাহস নাই।
— আমার সাইস নিয়া কথা বল্লেন তো! যান,একদিন আপনারে বুঝামু নে । টাউনের পোলাপান জানে ফারজানা কি পারে আর না পারে !
— সে তো টাউনের পোলাপানের কপাল। আমরা তো কিছুই জানলাম না।
— জানবেন,জানবেন। সময় হলে ঠিকই জানবেন। যেদিন জানবেন সেদিন আর কুলাইতে পারবেন না।
— কি জানুম, কি কুলাইতে পারুম না?
— এই ফারজানারে, আর ফারজানার সাহসরে !
ফারজানার কথা শুনে ভেতরে ভেতরে খুশির ঢেঁকুর উঠতে থাকে এনায়েতের। তৎক্ষণাৎ মাখনের মতো কোমল গলায় মন্তব্য করে সে—
— সেদিন যে কবে আইব !
— আসবে,আসবে। ধৈর্য্য ধরেন,ধৈর্যে কি না হয় ।
— আর কত ধইরজো ধরুম?
— ধরেন, ধরেন। দেখবেন হঠাৎ পেয়ে গেছেন। এখন যান তো এনায়েত ভাই। আমারে ছবি তুলতে দেন।
— এত ছবি তুলতাছ। আমার লগে একখান সেল্পি তুলতা !
— আপনের তো হেবি শখ ! ওই দেখেন আমার বোনেরা তাকায় আছে। আপনের সাথে কথা বলছি,এটা নিয়েই না আবার কি ঝামেলা হয় !
একটু দূরে সত্যি সত্যি কোমরে হাত রেখে দুটো মেয়ে রাগি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই দেখে এনায়েত মন্তব্য করে —
— তুমি আবার গেটিজ লইয়া ঘুরতে শুরু করলা কবে? এনায়েতের কথা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে ফারজানা ধমকে ওঠে—
— আমার বোনদের গেটিজ বইলেন না তো এনায়েত ভাই ।
— সরি, সরি। তা তুমি এত ছবি তুলতাছ ক্যান,ঘটনা কি ?
— ছবি তুলছি ফেসবুকে আপলোড দিব। শহরের পোলাপান দেখুক আমাদের গ্রাম কত সুন্দর ! ওরা জানুক করোনায় সবাই বন্দি থাকলেও, আমি বিন্দাস আছি।
— বুজলাম। তবে এইটা কোন ছবি তোলার জায়গা হইল ! তুমি আমার লগে চল, ছবি তোলার ভিউ কারে কয় তোমারে দেখামু নে। সেই সব সিন-সিনারি দিতে পারলেই তুমি হিট !
— আপনার মতলব আমি বুঝি না ! খালি আমারে বাইকে তোলার মতলব।
— এইটারে তুমি মতলব কইয়ো না পাখি, আমার অপমান লাগে। আমার কত দিনের শখ, তোমারে বাইকে লইয়া ঘুরুম। বাতাসে তোমার চুল উরবো, মাঝে মাঝে আমার পিঠে তুমি সুরসুরি দিবা !
— আপনি থামেন তো এনায়েত ভাই। খালি উল্টাপাল্টা কথা।
— কিসের উল্টাপাল্টা কথা ! আমার দোস্তরা সবাই জানে তোমার জন্যই আমার বাইক কেনা।
— বাইক নিয়ে এমন চাপাবাজি কত জন মেয়ের সামনে করেছেন?
— চাপাবাজি ! এইটা তুমি কি কইলা ! তোমার বাপ, মানে লতিফ চাচারেই জিগাইও,ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন কাজে আমার সময় আছে না কি?
— হইছে হইছে আর ভাব নিতে হবে না। আমি বুঝছি ।
— কি বুজছো তুমি?
— যা বোঝার বুঝছি।
— তুমি আসল কথাটাই তো বুজ নাই। আমি আসলে..
— এখন যাই এনায়েত ভাই আর সময় নাই। পরে কথা হবে। বিকালটা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল।
বলতে বলতে ফারজানা হাঁটা ধরে। আকুল হয়ে এনায়েত ডাকতে থাকে—
— কথাটা শুইনা যাও পাখি।
হিল্লোল তুলে যেতে যেতে একটু উচ্চস্বরে ফারজানা জানান দেয়— অন্য আর এক দিন !
হতাশ হয়ে মাথার পেছনটা চুলকাতে চুলকাতে কেমন একটা পিপাসার্ত চাহনি নিয়ে এনায়েত ফারজানার ফেলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখতে দেখতে চারদিকের আলো নিভে যায় । কদমগাছের পেছনে সূর্যটা ঢুবে গেছে প্রায়। ফুরফুরে হাওয়ার সাথে মিহিসুরে সন্ধ্যা নামে। চারপাশটা আস্তে আস্তে কেমন নিঝুম হয়ে যায়। পুলের নিচের কচুরিপানা হাল্কা পানিতে অল্প অল্প ঘুরতে থাকে। অবশ্য মিহিসুরের সন্ধ্যা কিংবা কচুরিপানার নাচ কোনটাই এনায়েতের চোখে পড়ে না। তার কেবলি মনে হয় — পাইয়াও পাইতাছি না তারে !
এনায়েত মনের হরষে বাইক চালিয়ে যখন দোকানে পৌঁছাল তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। বিকেলের মধ্যেই মানে সন্ধ্যার আগেই দোকান বন্ধ করার কথা, প্রশাসনের কড়া নির্দেশ অথচ দোকানের সামনে তখনও দু’এক জনের জটলা। এনায়েত উপস্থিত হয়েই হাঁকডাক শুরু করলো— কি রে লিটন-লিমন তোরা এখনও দোকান বন্ধ করস নাই? পুলিশ আসলে তো বাঁশটা আমিই খামু। কি রে কথা কস না ক্যান? দোকানের কর্মচারী দু’জন দোকানের ঝাঁপ ফেলে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। এনায়েতের ধমক খেয়ে লিটন বিরক্তির সুরে বলতে শুরু করে— এনায়েত মামু, বিকালে দোকান বন্ধ করার সাথে সাথে এই শালারা এসে হাজির। অদের যতই কই বিকালের পর চাল বেচা বন্ধ, তরা যা গা। কাইল আসিস। কিন্তু অরা কোন কথাও কয় না, এখান থাকি নড়েও না। খালি কয় দোকান মালিকের লগে এট্টু কতা আছিল। আমি যতই কই এনায়েত মামু আইজ আসপে না, অরা ততই....!
—তুই চুপ থাক ছ্যামড়া, তোর বকবকানি থামা। লিটনকে ধমক দিয়ে এনায়েত জড়োসড়ো হয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকায়—
—কি হইছে, আপনেদের সমস্যা কি কন তো?
এনায়েতের কথায় ভরসা পেয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকা লোকগুলোর মধ্যে থেকে বুড়ো মতন একজন দু’পা এগিয়ে এসে বলতে শুরু করে—
— আসলে বাবা হইছে কি!
মাঝপথেই লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে এনায়েত সতর্ক করে দেয়—
— শোনেন মুরব্বি,আপনেরে আগেই বইলা নেই,বিকালের পর চাল-ডাল বেঁচাকেনা মানা আছে। প্রশাসনের লোকজন ঝামেলা করে। তাছাড়া চাউলেরও শট আছে...
এনায়েত শেষ করার আগেই বুড়ো মতন লোকটা আর্জি জানায়—
— নোয়ায় বাবা ! হামরা চাউল-টাউল কিনবার আসি নাই বাহে !
— তাইলে আপনাদের সমস্যা কি? এখানে জটলা কইরা দাঁড়াইছেন ক্যান? এনায়েত ভারি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। লোকটা এবার সমস্যার কথা খুলে বলে—
— হামরা আসলে এটকার নোক নোয়াই বাহে। উত্তরবঙ্গের উলিপুর হামার বাড়ি। ঢাকাত গেছিনো কাজকামের খোজত। কিন্তু ওটে কোনা এলা নকডাউন না কি চলেছো তো, কোন কাজ-কাম নাই ! আর হামার জমানো টাকাও শ্যাষ!
— সে না হয় বুঝলাম। তা এত কতা আমারে কইতাছেন ক্যান ? লোকটাকে থামিয়ে বিরক্তির সুরে জিজ্ঞেস করে এনায়েত। এনায়েতের আচরণে অসম্ভব লজ্জিত হয় বুড়ো মতন মানুষটি। তৎক্ষণাৎ খুব দ্বিধা নিয়ে আর্জি জানায় সে—
— আসলে যে টেরাকটাত চড়ি হামরা কুড়িগ্রাম যাচ্ছিনো, সেটা এই রাস্তার ধারোত আসি নস্ট হইলে বাহে। সাথে সাথে হামরা বিপদত পড়িনো। পকটোত কোন টাকাও নাই, সাথোত কোন খাবার নাই, এই আইতের বেলা কি করি না করি ! তা তোমরা যদি একনা সাহায্য কননেন হয় , হামাগুলার খুব উপকার হইল হয় বাওয়া !
লোকটার কথাবার্তা শুনে চরম বিরক্তি ধরে গেল এনায়েতের। কি সব ফালতু ঝামেলা ! সে মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল কষে একটা ধমক লাগিয়ে এই লেবার শ্রেণির লোকগুলোকে বিদায় করে। কিন্তু সে একটা বিশেষ কারণে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তটা বাতিল করে। মাথাটা ঠাণ্ডা হতে বেশিক্ষণ লাগে না তার। একটু দূরে বিশেষ একজনকে আসতে দেখা যায়। দেখতে দেখতে এলাকার চেয়ারম্যান আরমান জোয়ার্দারের বহনকৃত রিক্সাটা ওদের কাছাকাছি এসে পরে। এলাকার চেয়ারম্যানের সামনে মহৎ হওয়ার এই মোক্ষম সুযোগটা এনায়েত কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি না। এই রকম একটা সুযোগ সে বহুদিন ধরেই খুঁজছিল। কখন কোন ব্যবহার কি কাজে লাগে বলা তো যায় না ! তাই এনায়েত একটু এগিয়ে চেয়ারম্যানকে একটা লম্বা সালাম ঠুকে। চেয়ারম্যান রিক্সা থামিয়ে হাসি মুখে জানতে চায়—
— কি রে এনায়েত। অহনও দোকান বন্ধ করোস নাই?
— না চাচা, দোকান বন্ধ। এই লোকেরা একটু বিপদে পড়ছে তো...! তাই একটু সাহায্য করছিলাম।
— কি , অদের সমস্যা কি ?
— আপনেরে বলতাছি চেয়ারম্যান সাব।
বলতে বলতে এনায়েত পকেট থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে বুড় লোকটার হাতে ধরিয়ে দেয়— নেন মুরব্বি, টাকাটা রাখেন। ঘন্টা খানেক পর ওই বড় রাস্তায় দাঁড়ালেই দু’একটা বাস-ট্রাক পাওয়া যাবে। ততক্ষণে কিছু খায়া লন। দেখতো লিমন দোকানে মুড়িটুড়ি আছে কি না !
বুড় লোকটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে এনায়েতের দিকে তাকিয়ে থাকে। এনায়েত সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে—
— এই হইল ঝামেলা চাচা ! সারাদিন দোকান সামলানির পর এসবও আমারে সামলাইতে হয়। গরীব লেবার শ্রেণির মানুষ, বাড়ি যাওয়ার টাকা নাই।বিপদে পড়ছে। রাস্তার ধারে ফজলুর ঔষধের দোকানে আগে গেছিল। সে আবার আমার কাছে পাঠাইছে। আপনে তো জানেন চাচা গরীব মাইনষে কষ্টে থাকলে আমার আবার ভালো লাগে না। তার উপর করোনার কালে মানুষের যে কষ্ট !
খানিক বিরক্ত হয়ে এনায়েতকে থামিয়ে দেয় চেয়ারম্যান—
— হ বুঝলাম ! দেশ সবায় নাম লেখাইছ। তা ভাল। চালায় যাও।
বলতে বলতে চেয়ারম্যানের রিক্সা চলতে শুরু করে। সেদিকে তাকিয়ে বিমলান্দ মনে বিড়বিড় করে এনায়েত—
— শালার ব্যাটা চেয়ারম্যান বুঝতাছি তোমার জ্বলতাছে ! তোমারে জ্বালানির জন্যই তো হাজার টাকাটা খয়রাত করলাম। খাঁড়াও তোমার ব্যবস্থাটাও করতাছি। সামনেরবার যখন বাপজানরে চেয়ারম্যানিতে দাঁড় করামু তখন দেখামু জ্বলুনি কারে কয়। খালি করোনাটা যায় লউক..!
এনায়েতের দৃঢ প্রত্যয়ে বটগাছের মগডালে বসে থাকা হুতুম পেঁচাটা যেনো ফিক করে হেসে ফেলে।
এর দিন সাতেক পর দোকানের সামনে একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে এনায়েত মুখ ভার করে বসে আছে। মনটা ভালো নেই তার। ফারজানার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়ার বাসনায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সে কি না করল ! কত কসরত, কত চেষ্টা— কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বাড়ির সামনের সেই পুলের সীমানা ছাড়া মেয়েটা আর এক পাও সামনে এগুবে না। দাঁড়ায় দাঁড়ায় গপ করতে আর কাঁহাতক ভালো লাগে ! ফারজানা তার আকুপাকু দেখে আর হাসে । অবশ্য সে তারে মাঝে মধ্যে সান্ত্বনাও দেয়— এমন করেন ক্যান এনায়েত ভাই ! ধৈর্য ধরেন। দেখবেন হঠাৎ একদিন আমি হাজির,আপনে বুঝতেও পারবেন না।
তা আর কত ধৈর্য ধরবে মানুষ ! তার কেমনটা যে লাগে ! এর উপর তার বাপ ফারুক মুন্সি শুরু করেছে আর এক ঝামেলা। কথা নাই, বার্তা নাই ঘোষণা দিল— শোন এনায়েত, তুই যেহেতু বাইরে বাইরে ঘুরিস, তাইলে আর ভেতর বাড়িত থাকিস না। বাইরের ওই বড় ঘরটাত থাক। এ সময়টায়একটু সতর্ক থাকতে তো দোষ নাই বাবা !
হায় রে করোনা! মানুষের মাঝে কি ভয়টাই না ঢুকায় দিসে। নিজের বাপটা পর্যন্ত করোনার ডরে কেমন ঘর আর বাহির করতাছে। সেই থেকে এনায়েত বাড়ির বাইরের ঘরটাতেই থাকা শুরু করেছে। এক দিক দিয়ে ওর জন্য ভালই হয়েছে। দোকানের মালামালের বস্তাগুলো পাহারা দেয়া হয়, আর যখন খুশি তখন ঘুরে বেড়ানোও যায়। তবে নতুন বিছানায় সহজে ঘুম আসতে চায় না, এই এক সমস্যা। সারারাত শুধু এপাশ-ওপাশ করেই কাটে।এই বিবিধ সমস্যায় বেচারার মনটা ভারি খারাপ।
আটকে রাখা দমটা ছেড়ে এনায়েত আকাশের দিকে তাকায়। গোটা আকাশ জুড়ে হাল্কা সাদা মেঘের ছড়াছড়ি। সাদার মাঝে কয়েকটা কালো মেঘও দেখা যায়। কেমন গুমট একট খরতাপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘামে-গরমে-বিরক্তিতে এনায়েতের একশেষ অবস্থা। রাগে চেয়ারের হাতলে একটা বাড়ি মারে সে—
—ধ্যুত, আর ভাল লাগে না।
— কি ভাল লাগে না রে মামুর ব্যাটা !
এনায়েত চমকে পেছনে থাকিয়ে দেখে তার জানে দোস্ত ভুট্টু দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
— আরে দোস্ত তুই !
আবেগের চোটে এনায়েত তার দোস্তকে জড়িয়ে ধরে আর কি ! লাফ দিয়ে সরে গিয়ে ভুট্টু হাসিমুখে সতর্ক করে—
— ওরে মামু ! সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবি না তুই !
— ঠিক আছে। ঠিক আছে। ব তুই । ওই লিটন আর একটা চেয়ার দে।
চেয়ারে বসতে বসতে হাসি মুখে ভুট্টু কুশল জিগায়—
— তারপর দোস্ত খবর কি ? তোর মুখখান এত শুকনা ক্যান?
— আর খবর ! বাদ দে, তোর কথা ক ।
— ক্যান,বাদ দিমু ক্যান? তোর জন্যই তো আজ বাইর হইলাম । এলাকায় ফিরলাম, অথচ তোর খবর লমু না তাই কি হয় !
— ভাল করছস ।
— আসলে তোর হইছে কি ক তো ? এত ঝিমায় গেছিস ক্যান? নাকি মেলাদিন ধইরা উপাস আছস ?
— রাখ বেটা, অন্য কথা ক।
— তার মানে ঠিক ধরছি। তা তর পাখি অহনও খাঁচায় ঢুকে নাই।
— আরে নাহ্ ! বহুত চালু মাল।
— কস কি ! আমাদের এনায়েত ওস্তাদরে ঘোল খাওয়াইতাছে...!
— যা ব্যাটা। করোনার সময় মাইয়ারা ঘর থাইকা বাইর হয় নাকি !
— যারা বাইর হওয়ার তারা ঠিকই বাইর হয়। আমার ময়না তো এইহানে আসার আগেও আমারে চুমাটুমা দিয়া বিদায় দিল।
— সবার কপাল কি তোর মতো !
— বুঝছি এলাকায় থাইকা ঝিমায় গেছস। তা টাউনে যাস না কতদিন?
— মাস দুয়েক হব।
— কস কি এনায়েত? মানে এতদিন তুই না খাইয়া আছস?
— ওই ব্যাটা করোনা দেখস না। তাছাড়া গেরামে ওইসব পামু কই !
— ও এই জন্য এত ঝিমায় গেছস ! তা মোবাইল -টোবাইল দেইখ্যাও তো চাঙ্গা থাকন যায়, নাকি?
— তুই জানস না গুগল অহন ওইসব সাইট বন্ধ কইরা দিসে ?
— হা হা হা। তার মানে এনায়েত মামু তুমি অহন সব দিক দিয়াই ধরার উপর আছ।
— তা কইবার পারস।
— শোন টেনশন করিস না। সব কিছুর ব্যবস্থা আমি করতাছি। আমার ল্যাপটপে বেশ কিছু জিনিস ডাউনলোড করা আছে। তোর পছন্দের মিয়া খইলফ্যারও দুই’একটা সিনসিনারি আছে বে । আর আমার ডয়ারে একটা বিদেশি বোতল থাকবার পারে।
— ভুট্টুর বাচ্চা তুই করছস কি !
— রাখ ব্যাটা! আর মধু নয়নে তাকাইতে হইব না। তুই সন্ধ্যার পর আয়া পরিস। অহন যাই গা দোস।
বলতে বলতে এনায়েতের কাঁধে একটা থাপ্পর মেরে ভুট্টু বিদায় নেয়। ভুট্টু চলে গেলে এনায়েত হাতপা লম্বা করে দিয়ে আড়মোড় ভাঙে। বহুদিন পর নিজের ভেতর তার কেমন একটা ফূর্তির ভাব হতে থাকে।
ভুট্টুর আস্তানা থেকে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় এনায়েতের। মন ভরে দেখে, গলা পর্যন্ত গিলে, দারুণ টইটুম্বুর অবস্থায় ফিরছিল সে। বহুদিন পর গলা ভেজাতে পেরে ভেতরটা তার সেই রকম তৃপ্ত আজ। মাতাল হওয়ার কি যে আনন্দ, যে হয় সেই জানে। কিন্তু শরীরটায় কিসের যেন জ্বলুনি শুরু হয়েছে ! যন্ত্রটা সেই যে উত্থিত হয়ে আছে, নরম হওয়ার কোন লক্ষণই নাই। আরে কপাল রে তার ! শরীর ভরা জ্বলুনি আর মন ভরা ফূর্তি নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে সে যখন তাদের বাড়ির সীমানায় পৌঁছাল তখন সারা বাড়ি নিঝুম। বাহিরের ঘরের দরজাটা তার খোলাই থাকে। কোন রকমে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে এনায়েত। নেশা ছুটে যাওয়ার ভয়ে সে আর আলোটাও জ্বালায় না। চেয়ার, টেবিল হাতড়ে হাতড়ে সোজা বিছানায়। কিন্তু একি ! বিছানায় কার সঙ্গে যেন ধাক্কা লাগে তার। নেশার ঘোরেও সে স্পষ্ট বুঝতে পারে ধাক্কাটা যার সঙ্গে লেগেছে সে একটা মেয়ে মানুষ ! মুহূর্তেই এনায়েতের মনে হলো ফারজানা নয় তো ! আবেগে উত্তেজনায় এনায়েত ফিসফিসিয়ে ওঠে— পাখি তুমি আসছ? নারী কন্ঠের নির্মল আহ্বান— আসছি সোনা, আস !
মূহুর্তেই এনায়েত লাফ দিয়ে পড়ে বিছানায়। নেশার ঘোর, উত্তেজিত শরীর এনায়েতকে যার পর নাই বেদিশা করে ফেলে। সামান্যতম সময় নষ্ট না করে এনায়েত প্রবেশ করতে চায় গহীন গন্তব্যে। মেয়েটিও যেন প্রস্তুত ও তৎপর ! এনায়েতের গভীর উত্তেজনাকে প্রশমিত করার জন্য নরম জমিন হয়ে এগিয়ে আসে মেয়েটি। এনায়েত তার সমস্ত শক্তি সমেত গেঁথে দিয়ে পশুর মতো গোঙাতে থাকে। একটু পর ক্লান্ত,ঘর্মাক্ত এনায়েতের পাশে শুয়ে ফিসফিসিয়ে জানতে চায় মেয়েটি—
— শান্তি পাইছ সোনা !
— পাইছি, পাইছি !
হাফাতে হাফাতে উত্তর দেয় এনায়েত। মেয়ে কন্ঠটি তখন আবেদন জানায়—
—তাইলে এবার মালপানি ছাড় মনু।
— মালপানি মানে ! বলতে বলতে এনায়েত লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় । ততক্ষণে তার নেশা সম্পূর্ণ ছুটে গেছে। তড়িৎ বেগে সে আলো জ্বালায়। গোটা বিছানা জুড়ে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে একটি সম্পূর্ণ নগ্ন নারী দেহ। কিন্তু নগ্ন নারী দেখে আর উত্তেজনা আসে না এনায়েতের, বরং সে হতাশায় চিৎকার দিয়ে ওঠে—
— লতিকা তুই !
আড়মোড় ভাঙতে ভাঙতে লতিকা উত্তর দেয়—
— হ আমি । আর কাউরে আশা করছিলা নাকি?
লতিকাকে দেখে বোবা হয়ে যায় এনায়েত। অবশ্য ঘটনার স্বরূপ বুঝতে তার এক মুহূর্তও লাগে না।সাথেসাথেই হিসহিসিয়ে ওঠে এনায়েত
— ওই মাগী,তুই এইখানে ক্যান?
জামা কাপড় পড়তে পড়তে লতিকা খেঁকিয়ে ওঠে—লটির পুত গালি দিবি না কইলাম। জলদি মাল ছাড়,যামুগা।আরও খ্যাপ আছে।
রাগে কাঁপতে কাঁপতে এনায়েত জানতে চায়—
— তার আগে ‘ক তুই এইখানে ক্যান?
— এইহানে ক্যান! তোমার চ্যাটের টাটানি উঠলে তুমি আমাদের ওখানে যাইতা না সোনা?
— হ যাইতাম।
— তা এখন আমার প্যাটে টান পড়ছে তাই আমিও আইছি।
—হারামী মাগী , তাই বইলা করোনাও মানবি না তুই !
— এনায়েত মাঙের পোলা, প্যাট কি করোনা মানে রে মাগা। এখন জলদি টাকা দে। দেরি করলেই কিন্তু লোক জোটামু।
টাকা বের করতে করতে রাগে ফুঁসতে থাকে এনায়েত
— আমার যদি করোনা-টরোনা কিছু হয় ! তরে আমি খুন কইরা ফালামু লতা।
— তুই আমার বালটা ছিঁড়িস হাউয়ার নাতি !
বলতে বলতে দরজাটা ধরাম করে লাগিয়ে বেড়িয়ে পড়ে লতিকা। এনায়েতের মনে হলো দরজার দুই কপাটে ওর মাথাটাই যেন পিষে দিল বেশ্যাটা। ভয়ে আতঙ্কে বন্ধ দরজাটার দিকে হিমদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে এনায়েত।
অলংকরণঃ তাইফ আদনান