জলধি
/ কবিতা
/ হারুন রশিদের তিনটি কবিতা
হারুন রশিদের তিনটি কবিতা
বরষা জল গিলতে থাকো
এক বর্ষাপ্রাতে সভা বসেছে
গুলশানে দাতা আর গ্রহিতাদের
উন্নয়নের সব রাঘব বোয়াল;
সারা দেশের বর্ষা এলাকা ভাগাভাগি।
এ যেন ভারত ভাগের দিল্লি কনফারেন্স-
মাউন্ট ব্যাটেন সামনে নেহেরু-জিন্নাহ
প্যাডেল-লিয়াকত মাওলানা আজাদ
ভারতবর্ষ বিছিয়ে কাটাকুটি।
বাটোয়ারা হবে পেল্লাই ভেটকির
গুদ্দা পেটি গাদা মস্তক লেজ।
তখন আগস্ট বর্ষা ছিলনা
বিলেতে তুষার ঝরেছিলো কী না জানিনা।
এখন বর্ষা দিন রাত ঝরছে
দাদি বলতন নাড়ি ছেড়া ঢক,
বিলেতিরা বলতো ক্যাট্স এন্ড ডগ
ছয়দিন অবিরাম ঝরছে,
শান্তিবাগ মুগদাপাড়া মতিঝিল
অর্ধেক ঢাকা পানির নীচে।
পাজেরো নিশান বিএমডব্লিউ হাকিঁয়ে
বর্ষা জলের রোমান্টিক এ্যানালিসিস।
মনিকগঞ্জ তলিয়ে ক্ষুধার্ত শিশু
গাইবান্ধা ফিল্ড গলা পানির নীচে,
শাল্লা সুনামগঞ্জ সব জলে সয়লাব
জেন্ডার ইমপাওয়ারমেন্ট নারী বিপন্ন,
আমার কাজ সারা বাংরাদেশ
আমি মোটাতাজা আমার খাই বেশী।
ঘড়েল দাতারা বিয়ারে চুমুক দিয়ে
কৌতুক চোখে মিটিমিটি হাসে।
বাইরে অঝোর বরষাধারা
ল্যাবটবে বরষার কর্মপরিকল্পনা,
ঠান্ডাঘরে উন্নয়ন তালবেলেমদের
দেশের মানচিত্র নিয়ে আঁকজোঁক।
কে কত পরিমান বরষাজল
গিলতে পারে তার বিষদ বিবরণ।
উত্তাল মার্চ
লাল নিশান দুলিয়ে লালে লাল
ঘাটকুলিদের মিছিল,
ধেয়ে আসে পাটমজুর
কাঁধে বাঁশেরলাঠি।
হাদীসপার্কে জনস্রোতের অগ্নিপ্লাবন!
ঈশান, নৈর্ঋত- দশ দিগন্তে
ঝড়ের মত গর্জে গর্জে।
নাগিনীর মতো নেচেনেচে
আসে সমুদ্রের ঊর্মিমালার মতো
হাবিয়া দোজখের অগ্নিস্রোত।
গগনবিদারী স্লোগান
প্রকম্পিত হাদিসপার্ক
হলুদশোভা রাধাচূড়া
আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া দুলে দুলে ওঠে।
কাটারি ফেলে চটমজুর,
বৈঠা হাতে রূপসাঘাটের মাঝি,
খদ্দের ফেলে মুরগিহাটার দেহবালিকা,
লাঙ্গল ফেলে বাশোঁখালির মান্দার গাইন,
অফিস তালা মেরে কেরানি-
আসে ক্ষুধার্ত পথশিশু,
মায়ের দুধের গন্ধ মেখে
ঊর্মিল কিশোর কিশোরী
বুকে আগুন জ্বেলে আসে।
আসে সব তূর্য দামামা বজিয়ে-
রাস্তা দাপিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নচোখে।
চারিদিক উত্তাল
সুমারের সাধ্যাতিত-
অযুত নিযুত কাতারে কাতার
ব্যঘ্র গর্জন আর বজ্রনিনাদ
আসমান ফেটে শহীদ মিনারে অগ্নিদ্রোহ।
আগুন গিলে তরুণ ছাত্র
মঞ্চে উঠে জনস্রোতে আগুন ছড়িয়ে দিলো,
সুন্দবনের বাওয়ালি কুঠার ফেলে
আগুন ঝরা ইশতেহার বিলিয়ে দিলো,
চটকলের মজুর
মঞ্চে উঠে উত্তেজেনায়
ভাষণ ভুলে মাকুটানা কর্কশ হাতে
মাইকের লৌহদন্ড দুমড়িয়ে দিলো!
বিলডাকাতিয়ার রাখাল
বাঁশি হাতে আগুনসুর ভাসিয়ে দিলো!
আঠারোবেকির রাইসমিলের আম্বিয়া বুবু
কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে মাইক্রোফোনে
পাকিস্তানকে জ্বালিয়ে দিলো-
স্বাধীনতার আগুন প্রজ্জ্বলিত হলো।
যে আগুন জ্বালাতে পারিনি
আমাকে মনে রাখার প্রয়োজন নেই...
শেষ রাতের দুঃস্বপ্নের মতো ভুলে যাবে রাত ভোর হলে...
অনধিকারে তোমাদের আঙিনায় এসেছিলাম অতিথি পাখির মতো...
পথ হারিয়ে তাই চলে যাবো অগোচরে
মুছে যাবে আমার সকল পদচিহ্ন
ভুলে যাবে আমার সব অসমাপ্ত গল্প
পরিত্যক্ত কফি কাপে কিছু কষ্ট রেখে যাবো শুধু
বৈরী বাতাসে রেখে যাবো কিছু দীর্ঘশ্বাস...
যদি কখনো না ফিরি আমাকে কেউ স্মরণ করোনা
কারণে-অকারণে কতো কথা বলেছি সত্য ভেবে
হয়তো সেগুলো মিথ্যা বা অর্ধসত্য...
যে আগুন জ্বালাতে চেয়েছিলাম
পারিনি সত্যিই পারিনি
ব্যর্থতার দায়ভার একান্তই আমার
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন