জলধি
/ কবিতা
/ স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র তিনটি কবিতা
স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র তিনটি কবিতা
পোয়েটিক কনভারসেশন
দুজনার সম্মুখ সহবস্থানে বাক্য কিংবা শব্দের কোন বায়বীয় ডাক চালাচালির অনুপস্থিতি টের পেলেও একটা বিষয় ঠিকই আমার নিউরনে গিয়ে অনুরণনসৃষ্টি করলো। তুমি কথা ছুড়ে দিয়েছো যেন কবিতার ভাষায়, এইযে আপনি চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছেন কেন? আমার জবাব আমি ছুড়ে দিলাম হাওয়া দোলা কলাপাতা বরাবর- বিস্তর সমুদ্র থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে পেরেছে কে কবে? চোখ যদিওবা কখনও ডুবন্ত জাহাজের মতো সমুদ্রে বিলীন হতে চায়।
ও আচ্ছা। তবে আমাকে সমুদ্র ভাবেন, আমিতো নদীও হতে পারি, যার গর্ভে ঘুমায় সাতপৃথিবীর যাতনা। হোক না নদী, ক্ষতি কী। যাতনা জলে যেমন আছে বৃক্ষেও তেমন। আমাকে তুমি বৃক্ষ ভাবতে পারো। এই মরনোত্তর স্বীকৃতির পৃথিবীতে সব লীলাপ্রনোদিত মিথ্যাচার। এখানে যতসব শব্দ রচনা হয় তার পেছনে একটি করে আত্মউপাখ্যান নিবেদিত থাকে। নিজেকে প্রতিষ্ঠার ব্রতই যেন প্রতিনিয়তর খেলা। আহা মুখোশের ওপাশের আমিকে কতদিন দেখিনা। শিশুর মতো হুহু করে কাঁদতে, ওলান চোষা গো শাবকের মতো নিষ্পাপ চিত্তে চোখ বন্ধ করে থাকতে। নদীতে ঝড় ওঠে জানোতো? শান্ত কম্পিত ঢেউয়ের সাথে সাথে তার অতলে লুকোনো থাকে মহাঢেউ। যার ঢেউয়ের গর্জন শুনে জন্ম তার ঢেউয়ে বিলীনের ভয় কিসের। প্রেম না দাও সঙ্গ দিতে পারো। আর কিছু না হোক কিছুটা আবেগতাড়িত ক্রীড়াযজ্ঞ দেখুক পৃথিবী। ভাতে ভাসা মানুষের জন্য একটি পাথেয় হয়ে থাকুক। এসো নদী, এসো সমুদ্র, এসো বৃক্ষ একে অন্যের প্রাণে মিলে যাও আমাদের পোয়েটিক কনভারসেশন শেষেও যেন সাগর তীর থেকে বালিহাঁসের শব্দ শোনা যায়।
হস্তকব্জিতে লাভারিত মুখ
হস্তকব্জিতে ভাসে লাভারিত মুখ
বেহানের সূর্য উদোর থেকে রঙফুলকি
জাহাজ দাবড়ে বেড়াচ্ছে,
মেঘমুখ নাবিকদল হয়ে ঈশ্বরিত চিবুক আঁকছে,
রাত পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঘেঁষে বৃষ্টিখেলায় মত্ত
ঈগলচোখা চুনোপক্ষী বিজেতার বেশে হরিণ সেজে আছে,
আজন্মদিন সাহসের করাতবৃক্ষ থেকে
ভেসে আছে হাহুতাশ।
একপক্ষে সে হৃদয় কাটে
শালজাদু আঙিনায় সাতরায় চকচকা ইলিশানদী
চাও চাইতে থাকো লাভারিত তালু পেতে
সবুজ বরফভাজি, একটুকরো আঞ্জামিত কালখোয়াব।
খবিশ কাটাখুলে পথ আঁকে কে
এই ঘন মেউঘা আঘ্রাণে
তাকে বলো পথ নয়, নদী বেশি জরুরি
জলজ জরায়ু থেকে আজ হতে
শুরু হলো অনন্ত নদীযাত্রা, কুয়াশা পথ
অনাবিল মেউঘা রঙের হাজিরা।
একটি অনর্থক কবিতা
(হা) হয়ে শুয়ে থাকা মৎসমুণ্ডের ভেতর
জলপাইয়ের মসলাগুঁজে দিয়ে
চর্চরিত রন্ধনক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
পাকশালায় পাকিস্তানি মুরগির দাপাদাপি
হস্ব আন্ডার বড় কুসুমে আছে কুসুমের বাপের তেজ,
আন্ডা হিজাও আর তেজ বাড়াও, ঘাড় খাও।
ভেজিটিরিয়ানের কৈতমে বাজে বেল অফ পিস।
(হুতাশ) করছে আমেনার মা বড় পোলার বড় ঘরে সাঙ্গা হইবো,
ট্রাংক ভর্তি সোনা দানার ঝুনঝুনি।
ফকিরকন্যা শোমেলার পানি ছিটায় ঘুম ভাঙে তার
শোমেলার হাতে মেহেদি।
কপ কপ করে রসগোল্লা গেলো,
স্বপ্ন ভঙ্গের উল্লাসে নাচো আট হাইত্যা জিব্বার সোসাইটি।
লেফট রাইট, রাইট লেফট করে বেড়ে চলছে জনসংখ্যা সূচক।
অতিমারি = আহো + যাও।
(করে) করে গুইনা নিছি সবগুলো নোট
হাত সেনিটাইজ করে আবারও গুনতে লাগছি
অথচ হাত হতে মুছে যায় রেখা,
জল বাড়ে অথচ নদী ছোট হয়।
মেঘে কামড় দিয়া ঘুমাইয়া পড়ি
পিছনে হিঙ্গল ফেলে মরা লাশ
মরতে চাইয়াও বেচারা জ্যাতা থাকে ঘুমের ভেতর।
লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা, আতর লাগাও
তবু যদি ঢাকা পরে মৃতদের ঘ্রাণ।
(লাভ) ১০০% ও লাভের আশায় নিজেকে
ল্যাবরা সস্তা বানাইয়া ফেলিওনা।
ইউ হ্যাভ এ্যা ড্রিম, তাকে ড্রিম লাইটের
নিভু নিভু নীল আলোয় মোমি করোনা,
তোমার ভেতরে কে ঢোকে নিরবে, তারে আটকাও
অথবা লাত্থি খাও, আলো দাও তারে
সেই তোমার প্রকৃত লাভ হইতে পারে।
(নেই) নেই করে অনেকগুলো মাথা সমুদ্রস্নানে ডুবিয়ে বসে আছে।
নিস্তব্ধ খালটার পাশে চাঁদ ভেঙে জল খায় শিয়াল,
সাপের গায়ে সাপ লেগে আছে, চাঁদের গায়ে চাঁদ।
তোমার কপালে লেহা আমার মৃত্যু ফাঁদ।
এই গজবিত শেষ রাত্তিরে সব কিছু শেষ হয়।
মোমের যৌনকাতর আলো নেভে,
আমি চোখ কচলে চেয়ে দেখি কোথাও কেউ নাই।
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন