জলধি
/ কবিতা
/ সুমন শামসুদ্দিনের তিনটি কবিতা
সুমন শামসুদ্দিনের তিনটি কবিতা
শূণ্যগর্ভ কবিতা
উদাস দুপুরে নিকট সুদূরে পূবের জানালা ধরে;
রবির কিরণ প্রতিভাসে আজ মনের গভীর ঘরে।
চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে তাই ভাবনা বিকাশে রত;
নিমগ্ন মন নিবিড় চিত্তে মনন সৃজনে ব্রত।
খুঁজে তো পাইনা ঋদ্ধ কবিরা কিভাবে যে গাঁথে ছন্দ!
শতবার ভেবে দেখেছি আমার কল্পনা দ্বার বন্ধ।
কতো প্রচেষ্টা কতো যে প্রয়াস ভাসাবো ভাবনা তরী!
পারিনি আঁকতে কবিতার ছবি যতোই রচনা পড়ি।
রাত পার হয়ে ভোর হয়ে যায় খুলেছি পদ্য খাতা;
উপসংহারে দেখি পুরোটাই বর্ণশূণ্য পাতা।
বর্ষাস্নাত আষাঢ়
ঝরো ঝরো বরিষণে সুললিত গান;
বনরাজি ভেজা যেনো হৃদয়েরই টান।
অবিরত ঝরে বারি কফি কাপে ঠোঁট;
হাতে রেখে লিখনিটা খুঁজে ফেরে নোট!
ছাতা ফেলে দিয়ে হাঁটি মেঘমালা ছাদ;
সারাদেহ ঘিরে থাকে আষাঢ়েরই স্বাদ।
সোঁদামাটি কদমেরই ঘ্রাণে ছোঁয়া মন;
বালিয়াড়ি, তরুলতা, জলে ধোয়া বন।
গিরিচূড়া, বেলাভূমি, মেঘে জলে সিক্ত;
উদাসীনি কুহকিনী তনু মনে রিক্ত।
অঢেল ঢলে পাহাড় তলে স্বচ্ছ জলের ধারা;
ঝর্ণা যেন নতুন প্রেমের ছন্দে মাতোয়ারা।
শীতল ছন্দে বাদল ধারা বিরাম বিহীন বান;
ভূ-তল জুড়ে একক রাগের মধুরিত তান।
মুষলধারায় গাছের পাতায় জলজ রাগের ধারা;
ব্যাঙের রাজ্যে বিয়ের সানাই কবি আত্মহারা!
বৃষ্টিজলে অসাড় প্রেমিক বিষণ্ণনতায় ভাসে;
প্রণয়তাপে পল্লবিত দেহযষ্টির আশে।
জলে-স্থলে ঝর্ণাধারা মেঘ ছুঁয়েছে জল;
একক সুরে আষাঢ় ধারার বর্ষা অবিরল।
সময়ের ক্রীতদাস
লিখতে বসেছি, কিন্তু লেখনী অনঢ়,
লেখনীর বোধে সময় হয়নি লিখার!
কাগজ আর কোন শব্দ গ্রহন করছে না,
কারন, সময় এখন স্তব্ধতার ভাষা শেখার!
শব্দসমূহ সহসা দূরে সরে রয়, চিন্তাক্লিষ্ট মন;
লিখনিবিদ্যা রপ্তকল্পে অসময়ে করি যে পণ!
অসময়ে ভেবেছি- যাবো বহুদূর, কিন্তু সময় পথ দেখালোনা!
পথের গতিপথে থমকে আছি, চলার সময় হলো না!
সৌর কক্ষপথ থেমে আছে মহাজাগতিক শূন্যতায়;
নীহারিকার চিত্রপট থেমে গেছে পৃথিবীর অক্ষরেখায়!
এখানে সময়ের খাঁচায় বন্দী মহাশূণ্যের ছবি;
কবি হতে চেয়েও আজ আমি অসময়ের কবি!
সময়ের কাছে আবদ্ধ প্রাণ, বৃক্ষরাজী, জীবাশ্ম আর ইতিহাস;
মেঘের চলাচল, বৃষ্টি, স্রোত আর ছায়াপথের আবাস।
তোমার কাছে ভালোবাসার খবর পৌঁছালো অনেক পরে!
যখন তুমি চলে গেছো সময়ের অনেক দূরে সরে!
বাড়ীর পাশে জলাশয়ের বয়স হয়েছে সহস্র বছর;
বাঁধা পরে আছে সময়ের হাতে, বাড়েনি নহর!
সময়ের কাঠগড়ায় বন্দী আজ মুহূর্তের সমাহার,
মুহূর্তগুলো সময়ের অন্ধকূপে হারিয়ে যাচ্ছে বারবার!
পৃথিবী আর দ্বিতীয় পথের সন্ধানে চলবে না!
স্তব্ধ হলে পরে, সময় আর কিছুই বলবে না!
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন