জন্মদাগ
তোমার স্মৃতি পেরিয়ে যেতে
আমি ভ্রমন করি নিকোটিনের সাকো,
মদের পেয়ালায়
আমি বিনা দ্বিধায় একে দিই খৈয়াম,
সাথে হাফিজের শরাব সুরার সাকি।
তবু
আমি তোমাকে ছুঁড়ে ফেলতে পারি না,
অবিশ্বাসের ক্যামোফ্লেজে নিজের হৃদয় লুকিয়ে রেখে
উচ্চারণ করতে পারি না- আমি কখনো জন্মাইনি।
তোমার চুলের ঘ্রাণ
আমার পাঁজরের তলদেশ হতে মুছে ফেলতে
রোজ রাতে আমি ক্রীতদাসের বেশে
চলে যাই,
সুগন্ধী বিক্রেতা এক কাফেলার সাথে-
সুদূর পারস্যের এক বেনামী নগরে।
তবু তোমার ঘ্রাণ, তোমার স্মৃতির
সবটুকু স্বর
জন্মদাগের মত আমার কপালে
লেখা থাকে জীবনভর।।
তোমারে মনে রাখি আমি
ডানায় দুরন্ত জীবনের অন্ধ ভায়োলিন বাজিয়ে
মূহুর্তের ব্যবধানে
তুমি উড়তে উড়তে মেঘের সীমানা পেরিয়ে গিয়েছ অবলীলায়;
চেনা দিগন্তের সরল জ্যামিতি
তুমি ছিঁড়ে দিয়েছ সহস্রবার- ধারালো নখের আঘাতে।
অথচ,
দেখো- কালো মেঘের মতন আদিম এক ব্যামোর অভিশাপে
একদিন
তুমি উড়বার আজন্ম অহমিকা পেছনে ফেলে
নেমে আসো
ধীরে
আরো ধীরে-
জড় বাদামী মাটিতে।
ডানার তারুন্য ক্ষয়ে গেলে লোকালয়ের আড়ালে
মৃত্যুর হিম অভ্যর্থনায় তুমি কাতরাতে থাকো,
কাতরে যাও
কাতরে যাও
তুমি একা,
কেবলই একা
যেন নিঃসঙ্গ এক ভীষণ ক্লান্ত ছায়া।
তোমার জন্য আমার মায়া হয়, চিল।
তোমার না থাকা ডানার তরঙ্গ
আজো শোকের বিউগল হয়ে বাজে ,
যখন
একটা বিকেল-খেয়ে-ওঠা-সন্ধ্যা নেমে আসে পৃথিবীতে।
এত মৃত্যুর ভীড়েও তোমার নাম আমি মনে রাখি
ওগো ধুসর রঙের একলা চিল;
বাতাসের পালে তোমার গন্ধ শুঁকে শুঁকে
আজো
আমি বলে দিতে পারি-
তুমি ছিলে এইখানে,
এই অরন্য এই লোকালয়ের পাঁজরের উপর
ঝুলে থাকা আকাশে নিজের জন্মের স্মৃতি আর
হা করে থাকা মৃত্যুর মুখ ভুলে গিয়ে,
তুমি ছিলে এইখানে-
মরতে থাকা অজস্র করুণ সব জীবনের ভীড়ে।
প্রেম
তোমার খুব করে কাছে গেলে,
শিউলি ফুলের ধবধবে সাদা জমিন ছেড়ে
অভিমানে
সমস্ত কমলা রঙ
কেমন আলগোছে খসে পড়ে!
তবে কি দূরত্বে প্রেম থাকে?
শুনেছি-
দূরের নক্ষত্র ভীষণ কাছে এলে
মাটির পৃথিবী তাতে কেবলি পোড়ে!
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন