জলধি
/ কবিতা
/ বিকাশ চন্দ'র তিনটি কবিতা
বিকাশ চন্দ'র তিনটি কবিতা
জলের জীবন
পথভোলা সঙ্গীহীন জনপদ মাটি জল অরণ্য বিষাদ মাদল,
খামচে আছে বৃক্ষ বুকের বল্কল দুর্বহ ক্ষত
গামছা জড়ানো আলগোছে আত্মার বলয়,
সকল অরণ্য জননী জানে গিলে খায় স্তাবকের চোখ
কুঠার করাতের দায় নেই দেখে অরণ্য রমনী রূপ টান ---
প্রতিবাদী যুবকের হাতে বাবুই ধান শস্য কেন্দু পাতা
বাতাসে অরণ্যের ঘুম ভাঙার খবর।
#
মানুষে অরণ্যে অঙ্কুরে কী প্রাণের বাঁধন,
বাঘের সাথে অরণ্য লুকোচুরি বুঝেছিল টোপের ছাগল,
বাঘ ছিলনা চিরকাল ছিল স্তাবক ও শিকারী ---
ক'জন যুবক উদ্ধত বড় বুক চাপড়ে বলেছিল আগুন জ্বালাই,
অনেক দোসর জুটেছিল অন্ধকার রঙে শরীর খেলা
ভয় ভয় কথা ছা'পোষা ঘরে মানুষ শিকারী বাস।
আদর্শ রমনী গাছের যন্ত্রণা ছিঁড়ে খায় বল্কল অন্তর্বাস,
রঙ বদলের অরণ্য পাতায় শরীরে ম্যাজিক আলোর ঝলক।
#
রাতের মহলে দাউ দাউ জ্বলন আলোহীন অন্তর অসুখ,
জঙ্গল বোঝেনি ঘাতক পোশাকে জড়িয়ে জলপাই পাতা ---
ভয়ের শব্দে টান টান রাত ছিঁড়ে সরল সবুজ পাতায় তুফান
অরণ্য পাঁজরে মাদলের বোল নুপুরে মাতালো জলের জীবন।
ঘরের চাবি
শাদা শরীর জুড়ে ভর দুপুরের রোদে রক্ত তারা খেলে
অক্ষর প্রীতি ঝরে পড়ছিল মানুষের ভাষা ঘরে,
কোন কোন চিত্রকর পরমাত্মা পেয়ে যান সম্ভ্রমে সম্পদে
একাকীত্বে কোন কবি দর্শনে চেতনার নির্মোহ ঘরে।
#
মরুভূমি জানেনা দক্ষ নাবিক সমুদ্র প্রেমে মজে মৎস্য কন্যা
গরিয়সী পা রেখেছে করুণায় মাটিতে,
বিষণ্ণতায় অবাক চোখে চিকচিক --- কি হেরিলাম...
দূরদর্শনে আলাপ চুক্তি মতো কথার মুক্তি ওড়াউড়ি
কাঁচের ঘরের দেয়ালে থমকে সকল কথকতা ।
#
বৃক্ষমাতা জন্মমাতা জানে শিকড়ে শিরায় অক্ষর যন্ত্রণা,
সকল ভূমি প্রেমে নামে চাঁদে জলে খেলে ঈশ্বর আল্লা---
ভাঙাচোর মন্দিরে উপাসনা ঘরে ঝুপড়ি হাই রাইজ প্রাকারে
কেবল পতাকা ওড়ে শহীদ মায়ের বুক হাউ হাউ কান্না আগুন,
গ্লাভস খুলে ফেলা হাত করমর্দনে আর রক্ত লাগবে না !
#
শূন্য পথের প্রগলভতা জানে জনপদ
ভাঙাচোরা মহাপ্রভুর সোনালি আলো কথা,
সকল দফারফা কাগজ তুলসী তলা ভেজে সারমেয় ক্রোধে
বাস্তুহীন মানুষের শূন্য কোঁচড় অধরা ঘরের চাবি।
বন বাতাসী
একবার ও কেউ স্বর্গ যানে চেপে আর উদ্যান দেখেনি ---
পাখি ফুল কুঁড়ি জানে নিষিদ্ধ সময়ের মড়ক,
হিসেব মেলে না শেষ জন্মের তবু বলে ভালোবাসো---
কালহীন সময় পুড়ে যায় ঝলসে যায় মিলন পরব,
শরীরে নেই জল খেলা কাল নেই কপালে শীতল হাত
অগোচরে শব্দ অক্ষর পোড়ে জন্ম ঠিকুজী প্রেম পত্রপুট।
#
মাটির তলায় শেকড় বেছানো শরীর বেঁধেছে বৃক্ষপিতা---
বৃক্ষমাতা ও জানে বল্কল ছিঁড়ে বাঁচে কুঁড়ি ফুল পাতার দেহ,
শবের হিসেবে ঠাঁই নেই শরীরের সাড়ে তিন হাত মাটি ---
অসম্পূর্ণ ফুলেরা খসে পড়ে রক্তহীন হা জন্ম কুণ্ডলী,
সনাতন খেলা ঘরে ছড়িয়ে বাঘিনী থাবার ছাপ---
আকাশ ভাঙা বৃষ্টির দায় নেই এক বুকে তৃষ্ণা আর শ্বাসের আবেগ।
#
কান্না জন্ম মৃত্যু নিষ্পাপ হাসি শিশু কাল---
মায়া শব্দ মহাকাশ ছুঁয়ে উত্তাল সাত সমুদ্র তেরো নদী,
এক পৃথিবীর সকল মোহনার এদিক ওদিক প্রাণময় বিষণ্ণতা
মেঘ পাখি ফুলেদের ভুলোভালা আনন্দ সম্মিলন,
ঘর ছাড়া মানুষের সাথে তবুও মেশে ঘরে ফেরা পাখি গান ---
পুনর্জন্ম সময়ে বন বাতাসী জানে ঘুম হীন কান্না রক্ত ঘাম।
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন