পর্ব ০৬।।
নোনা সমুদ্র যদি সন্তর্পণে উঁকি দেয় পিঁপড়েদের গৃহে, সুনির্ধারিত দিনে তলোয়ার মাছরা একত্রিত হয়ে সরপুঁটির কাছে গ্রিক ও ট্রয়ের উপখ্যান শোনে। পালাবদলের ধারাবাহিকতায়, সিন্দাবাদের কাঁধে চেপে-বসা প্রাচীন বুড়ো কি সব-সময় বাধ্যতামূলক দ্রাক্ষারসে আসক্ত?
অ্যালবাট্রসের মতো পাখা মেলে দিয়ে, সাঁজোয়া উচ্ছ্বাসে নিরাসক্ত ডানা ঝাপটায় দিগন্ত-বিলাসী জাহাজ অবিরল।
জল ও হাওয়ার তেপান্তরে, প্রতিটি প্রাণীই আমার নাক্ষত্রিক ভালবাসা!– এমন ভাবতে পারলে স্বর্গনিবাসী বৃষ্টিবিন্দুরা ভূতলে নেমে আসে। গোলন্দাজ বিষণ্ণতা দুর্ভাগ্যের পিঠে সওয়ার হয়ে ভোজবাজির মতো অদৃশ্য হয় কী দারুণ দক্ষতায়!
নিদারুণ আলুশাকের পেলবতামুখর সখ্যতা দিয়ে নীল তিমির ঝটিকা উপস্থিতি আড়াল কতখানি শৈল্পিক?
আক্ষরিক কাদাখোঁচা পাখি কাদার ঘুম খুটে-খুটে হেমন্ত বুনে দিল।
রাধার কলসখানা পয়মন্ত অভিমানে উতরোল। ডিঙির দুলুনি ধারে নিয়ে জলের অতলে ছলনার অনবদ্য বেশভূষা খুলে রেখে আসে নি কি কখনো?
সদ্য রান্না-করা সুখাদ্যের সুদূরাগত ঘ্রাণে হয়ত বাতিকগ্রস্ত সোনার মাছিরা। ওরা ওতে হেমিলনের বংশীবাদকের ছায়া দেখে-দেখে অভ্যস্ত!
বন্দোবস্ত-প্রথায়, অন্ধকারের থলেতে লুকিয়ে থাকে ঘরকুনো মায়ার থিকথিকে প্রচ্ছায়ারা। যেন রাক্ষসী মাকড়সার বোনা জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর তাদের বিস্তার!
ডহর অবহেলার কাঁটাতার পেরুতে গিয়ে বাজিমাতের ঘোড়া ঘৃণার বুলেটে বিক্ষত হতে পারে। সীমান্তের প্রহরী সেগুন কাঠের সকল সজারু তখনো কি সোহরাব-রুস্তমের দেশপ্রেম নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকবে থেকে-থেকে?
সন্দেহটা হঠাতি জেঁকে বসল। শঙ্কর কিংবা আত্মঘাতী প্রেতাত্মাদের পাড়ায় গিলোটিনের কদর আলটপকা কখন বেড়ে গিয়েছিল, তা ঠিক করে বলতে পারে নি সগির ওঝা। সরষে কেনাবেচার হাটে এখন তার ভীষণ কদর। ব্যবসায়ীরা সরষেতে আছর-করা ভূত নিয়ে বড়ো চিন্তিত। এদিকে সগির ওঝা জড়িয়ে পড়েছে অনিয়মিত কিছু ঝুট-ঝামেলাতে। সরষেকাতর ভূত-ছাড়ানো বিষয়ক উচ্চতর জ্ঞানকোষটা হঠাৎ করেই হারিয়ে গেছে তার অশরীরী-চর্চাকেন্দ্র হতে।
অনিবার্য টাইম মাগাজিনে প্রকাশিত ইঙ্গিতমূলক পরচাতে খরচাপ্রবণ সমাজের পেশীবহুল মানুষদের ছবি যতখানি নির্বিঘ্নে বর্ণাঢ্য মনে হয়, ঠিক ততখানি পরশ্রীকাতর নয় অভয়ারণ্যে ঘুরে-বেড়ানো সুশীল শেয়ালরা।
কাঁড়া আর আকাঁড়া রুটির খেয়ালহীন স্বাদের তিল-তিল বিহ্বলতা চুরি করে নিয়ে যায় রাজার কোতোয়াল কোন অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রের অনুকরণে? নাব্য হৃদের তত্ত্বাবধানে বৈষ্ণব কবির মতো কিছু পানকৌড়িও বালখিল্য আয়াসে ঘর বাঁধে নলখাগড়া-পাতানো আলোছায়ার তরতাজা রেস্তোরাঁতে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রতিশ্রুত-উপহার গোপাল ভাঁড় একনিষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে অনিদ্রা, সংশয় আর দুঃশ্চিন্তার মাঝে সমান ভাগ করে দেবে। কথাটা বিদ্যুৎ-বেগে চাউর হল চারদিকে। রাজা? তিনিও কী কম যান? করমর্দনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্লেষণ করে বসলেন, সুখের পায়রাদের বাকুমবাকুম ধ্বনির রাজসিক প্রকৃতি ও প্রত্যয়।
যথারীতি অতিশয় ব্যাকুলতার কারুকাজে-খচিত রাজদরবার জমে উঠেছিল। এমন সময় কোথা থেকে উজির ছুটে এসে জানালেন, ‘রাজজ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এবার দেশে তরমুজের বাম্পার ফলন হবে। তবে সমস্যা একটা আছে। তরমুজের একচেটিয়া ফলনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঠঠোকরাদের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। কাঠঠোকরারা যাতে তরমুজ বিনষ্ট করতে না পারে, সে-জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত হাজার দশেক আন্তরিক-কাকতাড়ুয়া আমদানি করা জরুরি।’
জহুরির সরল রৈখিক দৃষ্টি দিয়ে কেবলি চিনে নিলে মৌটুসি-বেলার ক্ষণ! তাকে বলে রেখো, অ্যারিস্টটলের জন্ম হলে শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞানেরই প্রসার হয় না, আলেকজান্ডারের মতো যুদ্ধবাজদেরও উত্থান ঘটে। তাহলে নিয়তি মানেই কি নোবেলের একহাতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা, আর অন্য হাতে মানবতা-ধ্বংসের সক্রিয় হাতিয়ার?
আর একটি অস্থির মাংসের দোকান দুপুরের খা খা রোদ চিরে বিদগ্ধ বৃষ্টিতে ঝুলে রইল। ক্ষুধাযন্ত্রণার কিছু সুখসুখ দলিলপত্র আছে। তাও আবার মরচে-ধরা; কেবলি হারিয়ে যায়।
বাড়িয়ে বলছি না– যদি দেবদূত চাও, উপজাত হিসেবে যুদ্ধবাজও পেতে পারো। (চলবে…)
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন