অষ্টপ্রহর
অষ্টপ্রহর তুমি আছো নির্জলা সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে
ঝলমলে বিকেল বেলায় ক্লান্ত রোদের নরম কেশর
পুলকিত পল্লব সাজে নীড়ে ফেরা পাখির ব্যস্ত কলতানে।
আমরা হেঁটে যাই পাতার মর্মরে, পাড়ি দিতে অলস আদিগন্ত পথ।
তোমার অধর জুড়ে থমকে থাকা বিমূর্ত গল্পে স্বপ্ন আঁকে দখিনের শান্ত সমীরণ।
ঘাস ফড়িংয়ের ডানায় লেগে থাকে বেলা শেষের গান।
ভেসে আসে কাল রাখালের বিস্মৃত অভিমান।
খেলা করে অপার্থিব সৌরভ পরাবাস্তবের অতল অন্ধকারে।
রঙ সাগরে সাঁতরে বেড়ায় আধ ঘুমন্ত লালচে আভা।
অপরাহ্নের রঙ্গিন তুলিতে আবীর মাখে অস্তিত্বের পূর্ণ সুষমায়।
তোমার স্নিগ্ধ কন্ঠস্বরে শেকল ভাঙ্গে জীর্ণ কুটিরের ব্যথাতুর সুখ।
সীমান্ত পাড়ি দেয় হৃদয়ের নির্ঘুম হিসেব, স্পন্দিত দহনের উষ্ণতায়৷
ক্ষোভ
ক্ষোভ ছিলো সকালের বিষন্ন আলোতে
যে ছিলো প্রতারিত, প্রত্যাখ্যাত, বিষাক্ত রাতের প্রহরে।
ক্ষোভ ছিলো হার মানা বেকার ছেলেটির
যে বাজি ধরেছিলো হৃদয় কুটিরের শেষ আশার দীপ্তিটুকু, একটি আটপৌরে চাকরীর খোঁজে।
ক্ষোভ ছিলো মধ্য দুপুরের আগুন ঝরা স্পর্শে
যে ঘৃণা করে ধরিত্রীর বুকে অট্টহাসমান, সমস্ত নৃশংসতা আর অবহেলাকে।
ক্ষোভ ছিলো প্রেমিকার তৃষ্ণার্ত আলিঙ্গনে।
যে স্নিগ্ধতার মিথ্যে আশ্বাসে হারিয়ে গিয়েছে, সময়ের মাতাল প্লাবনে।
ক্ষোভ ছিলো গুমরে থাকা বোবা ক্রন্দনে
যে বারবার মরেছে একটি সবুজ আর্তি প্রকাশের বাসনায়।
ক্ষোভ ছিলো ক্ষত-বিক্ষত প্রতিটি স্বপ্নের৷
যারা পুড়েছিলো প্রচণ্ড হাহাকারে, ভ্রান্ত সান্ত্বনার অসহ্য আগুনে।
ক্ষোভ ছিলো নোংরা বস্তির এক শিশুর মর্মভেদী আর্তনাদে।
যে সমস্ত শৃঙখল ছিন্ন করে, শুষে নিতে চায় সমগ্র পৃথিবী।
ক্ষোভ ছিলো ভুখা মিছিলের ভীড়ে মিশে যাওয়া, তাজা রক্তের ফোঁটায়।
যারা ঝড়েছিলো একটি পরিষ্কার প্রভাতের অনিশ্চিত নিশ্চয়তায়।
ক্ষোভ ছিলো উত্তাল সমুদ্রের উন্মত্ত অহঙ্কারে।
যে ধ্বংসের লীলাখেলায় জিতে নিতে চায়, এক পশলা শান্তির নিশ্বাস।
ক্ষোভ ছিলো রাজ্যের অজস্র ক্ষোভে।
যাদের বিস্ফারিত চোখ ঘুরে এসেছিলো, লক্ষ বছরের দগ্ধ ইতিহাসে।
সুপ্রিয়া গৌরী
বহুদিন যাবত আমার হৃদয়টা আকাশ দেখেনি।
অদম্য কিশোরের মত ঘর পালিয়ে ছুটে যতদূর যাওয়া যায়।
আকাশ, আকাশ আর অবাধ্য নীল আকাশ
ঘুচে যাওয়া সময় স্রোত হয়তো ভুলিয়ে দিয়েছিলো সবটাই
গতকাল পর্যন্ত আমার শুধু এতটুকুই ভরসা ছিলো,
প্রতিটি সকালের প্রথম আলোর ভেতর আমি কুড়িয়ে নিতে পারি একটি বা বড়জোর দুটি পুষ্পগুচ্ছ।
যা সন্ধ্যা মেলানোর আগেই শুকিয়ে গিয়ে আমার শুধু বোঝাই বাড়িয়েছে।
কিন্তু এমন সাদামাটা রোদের ছাপোষা সংসারে এ কেমন উদ্দাম ঝড়?
আচমকাই হারিয়ে গিয়েছে আমার অস্তিত্বের নিয়ন্ত্রণ
আমি তো পার করছিলাম আমার অন্য দশটা ধুলোময় দিনের মতই একটা দিন
হঠাৎ করে মুহুর্তের মধ্যেই এই দম বন্ধ করা জলোচ্ছ্বাসের অর্থ কী?
একবার ভাবলাম, আমি কি তলিয়ে যাচ্ছি কোনো ছায়াময় ঘুমের অদেখা ইন্দ্রলোকে?
না...স্বপ্নে বোধহয় এমন স্পষ্ট হয়ে অনুভূতিরা খেলা করে না...
ফেনিল সুখের মত জোয়ার তুলে গেছে আলতো অপরিচিত আরাম।
বরফ গলা শীতল শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে মৃগ হরিণীর কস্তুরিত উচ্ছ্বাস।
জোছনার পশরে মেলে তো দিয়েছো এক বুক লজ্জা
আমাকে ঘিরেছে ঘন জলের শব্দে তরঙ্গিত এক রাত্রি বোবা বাতাস...
তোমার কন্ঠ শরত সকালের শিউলির মত স্নিগ্ধ
তোমার কন্ঠগত ব্যক্তিত্ব বর্ষাস্নাত চিকন লতার মতই জীবন্ত।
ঝলমলে রৌদ্রস্নানে সোনালী তুষারের মত ছড়িয়েছো এতটা সৌরভ, এতটা নরম আর এতটা শুদ্ধতা।
একটাই তো ছোট হৃদয়, কতটা সহ্য করতে পারে?
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন