৩৯
শস্যের পতাকা ওড়ে পূর্বে, ছয় দফা দাবি নিয়ে
কিছু ভেটফল জেগে থাকে, কিছু তৃষিত জলধি
ছুটে যায় সমুদ্রের দিকে, হরিণ ধাওয়া করে
শিকারিকে—বলে, আজ দাবায়া রাখতে পারবা না,
যদি রক্ষা চাও তবে ফেলে দাও তীর ও ধনুক,
এই অমিত শস্যের পতাকাকে স্যালুট জানাও।
পাখির পতাকা ওড়ে পূর্বে, ছয় দফা দাবি নিয়ে
সন্ধ্যা নামে থানকুনি পাতার ওপর। আকাশের
অজস্র তারার মধ্যে কোন তারাটি মুজিব, আর
কোন পাখিটি মুজিব নামে কঙ্কর বর্ষণ করে
জালেমের মাথার ওপর—সবই জনতা জানে।
নিজস্ব মুদ্রার দেশে হরিণের ঘুম, কে ভাঙ্গাবে?
দাবায়া রাখবে কোন ইবলিশ? ছয়টি তিরের
আঘাতে ভাঙ্গছে দেখ দাজ্জালের অভেদ্য প্রাসাদ।
৪০
একটি তর্জনী—জন্ম যার দীপ্র জিরাফের গর্ভে,
য়ার মধুমতি নদীর কিনারে—উঁচা হতে হতে
দেখ আকাশ ছুঁয়েছে। গোত্রমাতা, তোমরা যেদিন
মেঠো চন্দ্রিমাতে শঙ্খ লেগেছিলে, সেদিন খোকার
মুখ ফুটে উঠেছিল সুরমা ও যমুনায়, আর
ছোট্ট একটি তর্জনী দেখা দিল তমাল-রাত্রিতে,
রাজন্য-কুমিরদের তাড়া করে করে সেটি ছুটে
চলেছিল পশ্চিমের ডরালু সীমান্তে। ভেবে দেখ—
একটি তর্জনী, জন্ম শিমুল ফুলের জরায়ুতে,
তার উত্তরাধিকার পেতে শত্রুর ব্যারাক থেকেও
পালিয়ে এসেছে কিছু গোলা। যেন এক বজ্রফুল
রেসকোর্স মাঠে প্রলম্বিত হতে হতে, গর্ভাশয়ে
টেনে নিয়েছিল দশ লক্ষ দোয়েল পাখির কান্না।
আড়ালে মায়ের মুখ রেখে বন্দুকের মুখোমুখি
দাঁড়াল, আদেশ নিষেধের একটি তর্জনী শুধু।
৪১
কালো দীপ্ত একটি চশমা, বিদেশি রাজার মুখ
থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, সমস্ত প্রটোকল ভেঙে দেখে—
ঝিঙে ফুলে ছেয়ে গেছে দূরের দিগন্ত। চেয়ে দেখে—
গোধূলির খাতা থেকে কয়েকটি সবুজ অক্ষর
লাফিয়ে পড়ছে রেসকোর্স মাঠে, আর খণ্ড খণ্ড
কয়েকটি মিছিল কার্পাস তুলা হয়ে জড় হচ্ছে
ময়দানে। চশমাটি কালো। মোটা ফ্রেম। তাতে বাঁধা
বজ্রের চেতনা—লাঙ্গলে, শিশিরে, মাটির পাঁজরে
দুর্গ গড়ে তোল, ঘরে ঘরে গড়ে তোল আজ বুনো
জ্যোৎস্নার দেয়াল—শোনো, আমি যদি হুকুম দিবার
নাও পারি, তোমরা গুঁড়িয়ে দিও কামানের নল।
প্রণয়ী রক্তের পারাপার নিয়ে যদি জেগে ওঠে
বত্রিশ নম্বর, বলিও চশমাটি ভিজা ছিল প্রেমে
তার মোটা ফ্রেমে বাঁধা ছিল অতলান্ত বাংলাদেশ।
অলংকরণঃ তাইফ আদনান