জলধি
/ কবিতা
/ কুশল ভৌমিকের পাঁচটি কবিতা
কুশল ভৌমিকের পাঁচটি কবিতা
অনন্য উচ্চতা
বুঝে না বুঝে যারা প্রতিদিন ছুড়ে দিচ্ছো অন্ধকার
জেনে রেখো একদিন
অন্ধকারকে নিয়ে যাবো অনন্য উচ্চতায়।
সারা গায়ে মেখে দেবো ভ্যানগগের অলস সৌন্দর্য
সেতারের ঝঙ্কার কিংবা পিয়ানোর মিহি তরঙ্গ
ক্রমশ তোমাদের দিকে বাড়িয়ে দেবে হাত
চোখের সামনে ভেসে উঠবে তৃপ্তির স্বচ্ছ সরোবর
দেখবে, অ্যামাজন লিলির সবুজ পাতায়
আধশোয়া আমি
উপভোগ করছি মাছেদের নগরকীর্তন।
তোমাদের ছুড়ে দেয়া অন্ধকারে
অলৌকিক নক্ষত্রের নাচ দেখে
দীর্ঘায়িত হবে তোমাদের দীর্ঘশ্বাস।
ক্লান্তির কালো পড়বে দু'চোখে
অথচ ফেরাতে পারবে না চোখ
আমাকে ছোঁবার অক্ষমতা
কুড়ে কুড়ে হত্যা করবে তোমাদের।
তোমাদের ছুড়ে দেয়া অন্ধকার
অলৌকিক আলো হয়ে বাজাবে সানাই
তোমরা তখন আত্ম-আবিস্কারের সন্ধিক্ষণে
আলোর ব্যবহার তোমাদের জানা নাই।
জেসমিন ১
আকাশে না, বাতাসেও নয়
দারুণ কবিতা ফলে
ধলেশ্বরীর পলি জমা নরম মাটিতে।
করোটিতে অদ্ভুত চিন্তার পোকা
অবিন্যস্ত ডায়াগ্রাম আঁকে
শব্দহীন শিল্প এখন শিল্পহীন শব্দের ফাঁদে।
ধান ভানে জেসমিন
গান গায় গুনগুন ভুলভাল সুরে
ধলেশ্বরীর অফুরান যৌবন
কাখের কলসিতে নেয় ভরে
কাশবনে নেমে আসে সমস্ত আকাশ
মেঘের ভেতর জেসমিনের টোলপড়া হাসি।
যাবতীয় শিল্পবাজি আর্ট ইভ্যালুয়েশন
মুখ গুজে পড়ে থাকে নরম মাটিতে
ভেজা শরীরের ডালে ডালে ঝুলে থাকে রুপক
জেসমিনের শরীর থেকে কবিতার গন্ধ ভেসে আসে।
জেসমিন -২
ডেসডিমোনাকে হত্যা করার পর
ওথেলোর শরীর ঢুকে পড়লো
দৃশ্যমান ছায়ার ভেতর
এখন ইয়াগোই রায় দেবেন
ওথেলো কতটুকু প্রেমিক,কতটুকু বিপ্লবী।
আমি হাতের মুঠোয় প্রেম
বুকের ভেতর বিপ্লব নিয়ে
কতবার হেঁটে এসেছি তোমার পরাবাস্তব উঠোনে
তোমার বাবাকে ব্রাবেনশিও ভেবে
লুকিয়েছি ঠান্ডা কফিনে
আমার শরীরে আজও বাজে
দিন-রাত
মৃত্যুর ধ্রুপদী সঙ্গীত।
জেসমিন জেসমিন
তুমি নও ডেসডিমোনা
আমিও ওথেলো নই
তবুও আমাদের শরীরে দৃশ্যের দাগ
আঙুলের ডগায় গেঁথে যাওয়া স্মৃতি
বিশেষণের ঘোলাজলে ডুবতে ডুবতে
তুমি আর আমি
ভুলে যাওয়া দুটি সর্বনাম।
আমরা কী পাঠ্য হবো আগামী পুরাণে?
তিস্তা যেদিন ভাগ হয়ে যায়
তিস্তা যেদিন ভাগ হয়ে যায়
বাতাসের বিপরীতে দোল খায় টাঙ্গাইল ও হুগলী
সীমান্তের মতো সম্পর্কগুলোও আটকে থাকে
বর্ডারলাইন বরাবর -কাঁটাতারে।
গঙ্গার জল একই নিয়মে গড়িয়ে পড়ে পদ্মায়
একই বাতাসে দুলতে থাকে
যশোর রোডের শতবর্ষী বৃক্ষ
রবীন্দ্র-নজরুল একই দ্যোতনায় দূর করে দেয়
যাবতীয় সেমিকোলন, হাইফেন
কেবল ভিসা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে
দিদাইয়ের চোখের জল
রাষ্ট্রের ভেতর তৈরি করে নো-ম্যানস ল্যান্ড!
ভদ্রেশ্বর সি,সি,চ্যাটার্জি রোডে ছড়িয়ে পড়া
বড়ো মামার দীর্ঘশ্বাস
গঙ্গা পদ্মা যমুনা পেড়িয়ে আছড়ে পড়ে
সদুল্যাপুর স্কুল মাঠে
আঁজলা ভরে সেই দীর্ঘশ্বাস মা তুলে দেয়
দিদাইয়ের আঁচলে।
সেই থেকে দিদাই জানে
তাঁর হৃৎপিন্ড বরাবর কেউ চালিয়েছে করাত
এপার-ওপার
মাঝখানে তিস্তার জল
টকটকে লাল...
হলুদপতন
কোন কোন বাউলসন্ধ্যায় আকাশ থেকে খসে পড়ে একতারা।চাঁদের শরীর থেকে নেমে আসা মৃত্যুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে উঠোনে।দু'হাত শূন্যে তুলে কে যেন গেয়ে ওঠে বৈষ্ণব পদাবলী। যমুনার জলে ভেসে ওঠে বিগত জন্মের আক্ষেপ। ঘর ছাড়েন শ্রী গৌরহরি।
আহা,বিষ্ণুপ্রিয়া তুমি কেন রাধা হতে পারো না?
চৈতন্য চরিতামৃত থেকে খসে পড়ে হলুদ রঙের পাতা।হলুদ চাঁদের সুষমায় হারিয়ে যায় আড়াল। হলুদ পাতাগুলো ঝরে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। সারা গায়ে হলুদ মেখে তিনিও যাচ্ছেন আপন আলয়ে।
আহা,হলুদসন্ধ্যায় সবাই কি শিখে নেয় পতনের মন্ত্র?
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন