জলধি
/ কবিতা
/ কাজী জহির আহমেদের তিনটি কবিতা
কাজী জহির আহমেদের তিনটি কবিতা
একটি অনন্ত চুম্বন
অতঃপর; একটি অনন্ত চুম্বনের পর
স্বীকার করে নেই—
আমি অপরাধী ছিলাম
অথচ তোমার ঝলমলে কম্পিত মাশালে
স্বর্গ হতে ফিরেছিলো সুরের ধ্বণী
নদীর বুকে বয়ে চলা হাজার বছরের প্রাচীন স্রোত,
মুহূর্তেই থেমে গেলো।
সভ্যতার মগজে গড়ে উঠা পুড়নো প্রাচীর,
ভেঙ্গে সব চৌচির হলো।
প্রথাবদ্ধ সময়ের কথা; নৈঃশব্দের গভীর আঁধার, লণ্ডভণ্ড করে দিলো সব আলোকিত সময়।
একটি অনন্ত চুম্বন; আর —
তোমার হাতের তালুতে আমার যৌবন রেখা আঁকতেই
আমায় তুমি অপরাধী বললে।
আমি নির্বাক অপরাধী প্রেমিক;
তোমার রায়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে
— রয়ে গেলাম তোমার হৃদয়ে।
অঘ্রান এলেই
আঘ্রান এলেই মনে পড়ে-
হিমেল হাওয়া দোলে ঝোঁপ-ঝাড়
মন আড়মোড়া ভাঙতো বিছানায় দূর নিঃসঙ্গ তরীতে
শর্বরী দোলে, স্মৃতিলিপি আঁকে হেমন্তে সন্ধ্যার।
অঘ্রান এলেই ওটুকুই মনে পড়ে. . .
প্রস্থান
বিশ্বাস রেখো-
বিশ্বকর্তা শান্তির দূত পাঠাবেন একদিন,
যেদিন আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামবে-
বৃষ্টির শেষে জ্যোৎস্না রাতে জানালাসমৃদ্ধ ঝলমলে নরম আলো হেসে উঠবে
জানালার পর্দার পেছনে তিনি হয়তো ইশারা করবে,
ধূসর পর্দায় তিনিই একমাত্র লুকোচুরি খেলতে পছন্দ করেন।
দ্যাখো মানুষেরা তাঁর বিশ্বাসে লাভ করেছে স্বকীয়তা
আবার একদিন সব ভুলে গেছে
স্বর্গভূমিকে করেছে অপবিত্র
বাতাসে বারুদের গন্ধ- রক্তের স্রোত- চারদিকে রক্তসিক্ত খেলা
কতোশতো দায়িত্ব, কতো কর্তব্য আজ মানুষের কাঁধে
ক্ষয় হোয়া দেহে তবু যুদ্ধ জয়ের হুংকার
তবুও কি জয় হতে পেরেছি?
একজনের প্রস্থানে আবার নতুন করে স্বপ্নযাত্রা শুরু,
তিনি সত্যিই জানালার পর্দার ফাঁকে হাসতে জানেন
অট্টহাসি আর শান্তি বেচা-কেনার কি চমৎকার হাট বসিয়েছেন তিনি
এখানে আমরা সবাই জয়ী
কেবল প্রস্থান আর অবস্থান ঘটে প্রতিনিয়ত তাঁর ইশারায়।
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন