জলধি / কবিতা / কবিতাগুচ্ছ
Share:
কবিতাগুচ্ছ
ইতিহাস 
মহামানব হতে আসিনি
তবে এটুকু বলতে পারি- ইতিহাস বিবর্জিত  মানুষ নইতো আমি 
যেটুকু স্মৃতি, মাটির পরতে পরতে অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছে প্রকৃতি 
তাঁকে-ই কি বলেছি-
উদ্গত বীজে আকাশ ছুঁবে উদ্ধত মিনার এবার? 
 
কতভাবে, কতরূপে লাঞ্ছিত হয়েছে জননী আমার 
সে কথা ভুলে যায়নি কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানী গুণী পালাকার,
কি করে ভাবি 
বিপ্লবী হাজরা সূর্য সেন গাঙেয় বদ্বীপে জন্ম নেবে না আর?
 
এভাবেই দিন যায়
তবুও জন্মবৃত্তান্তে লিখে রাখি-
এ অভাগা দেশ যে জননী সর্বমূলে সোনার বাংলা আমার!

বিস্মৃতি 
যতদূর চোখ যায় ততদূরই সীমারেখা 
এর বেশিকিছু হলে মানুষ জ্ঞানী বলে তাকে,
আমাদের পাতা ঝরা দেশে হৈহৈ চড়ুই এখন মাঠে 
পিঁপড়ের দলে যদি মিছরি বেচে হাটে 
হাওয়ায় দোলানো দাঁড়ি তখন মাথায় চড়ে বসে,
এমন-ই দিনে 
ফুলেরা মিছিলে নেমেছে কৈবর্ত বেশে 
মুখধোয়া নদী উঠেছে জেগে হিংস্র সর্প ছোবলে 
ওহে নদী!পাখি! মাতৃস্বরূপা জননী জন্মভূমি 
এ বিস্মৃতি যদি মুছে ফেলি সবুজ বৃত্ত-ক্ষতে
লাল লাল সূর্য তখন জ্বলে উঠবে বিজয়ের হাস্য-রূপে! 

ক্রোধিত পুরুষ 
আশ্বিন গেলো কার্তিক গেলো ফাল্গুন আসি আসি 
তোমার চোখে দেখেছি আমি অপরূপ বাংলার হাসি 
 
পিতা গেলো যুদ্ধে সেবার, রক্তে ভেজা সাঁতার কাটা নদী 
গ্রেনেড বাঁধা বুকে আমার চৈত্র যেন বৈশাখ ঝড়ে অগ্নিমূর্তি সেঁজুতি  
 
দাউ দাউ দাউ জ্বলে আগুন,পুড়ে যায় কত বাড়ি 
শত্রু ঘোষিত বলাৎকারে বাংলা যেন ধর্ষিতা এক রূপসী  
 
স্বাধীন দেশে স্বাধীন আমি, মুখে বাংলায় কথা বলি
পিতার কাঁধের বন্দুক ছুঁয়ে আজও যেন অর্জুন পুত্র 'অভিমন্যু' আমি! 

জন্মভূমি 
ভালো লাগে হেমন্তের রৌদ্রতপ্ত সকাল 
নীল নীল আকাশে পাখিদের নির্বিঘ্ন কলতান 
নদীমুখে গেঁয়ো মানুষের ঝুঁকে পড়া সেই মধুকৈটভ সংহার 
 
আঁজলা ভরা জলে তৃষ্ণা নিবারণ আর কত করা যায়? 
বুকের পাটাতনে
হলুদ পাতা সব জমা করেছে শ্রাবণ মেঘের দীর্ঘশ্বাস, 
তোমাকে তো বলাই হয়নি
ফাগুন নামের মেয়েটি আজ ভুলে গেছে অতিব নীলাভ রঙের চাষ
 
মৃত যারা 
তাঁরাও ভুলে গেছে
আউশ আমনের সোঁদাগন্ধ ভরা কৃষাণ কুলের মাটি, 
আমি কি আমাকে ভুলেছি
নাকি অস্তিত্বের শেকড়ে পুঁতে রেখেছি মায়ের মতো শাশ্বত  আমারই 'জন্মভূমি'?  
রক্তকমল মুখশ্রী 
আমাদের দেখা নাও হতে পারে 
এমনও হতে পারে
বিমূর্ত আকাশে বিলীন হবার প'র 
ছায়াপথের কোন এক গর্তে আটকা পড়েছি আমি 
নক্ষত্র চ্যুত কোন এক রাতে 
যদি এলিয়েন ডানায় ভর করে ফিরে আসি
পলাশ স্নিগ্ধতায় মায়াকানন ষোল কোটি মানুষের দেশে 
তখন কি চিনতে পারবে 
ধুলি ওড়া সন্ধ্যায় কে ছিল নীলাচল আকাশমুখী?  
 
আমাদের দেখা নাও হতে পারে 
এমনও হতে পারে 
ভয়ানক যুদ্ধে মরে যাওয়া ক্রিস্টোফারই আমি 
তখন যদি চিনতে পারো 
দেখে নিও
কতটা শ্যামল ছিল
ডুমুর ফোটা বাংলার ওই রক্তকমল মুখশ্রী!


অলংকরণঃ তাইফ আদনান