জলধি / কবিতা / ওলগা এবং লেলিনগ্রাদ অবরোধ নিয়ে তাঁর তিনটি কবিতা
Share:
ওলগা এবং লেলিনগ্রাদ অবরোধ নিয়ে তাঁর তিনটি কবিতা

প্রাসঙ্গিক ও বাঙলায়ন: মীম মিজান

[ওলগা ফাইওদোরোভনা বেরিঘোলজ( ১৬ মে, ১৯১০- ১৩ নভেম্বর, ১৯৭৫) একজন সোভিয়েত কবি। নাৎসি বাহিনি যখন লেলিনগ্রাদ অবরোধ করে রেখেছিলো সেসময় ওলগা পুরো শহরের লোকজনের নিকট শক্তিমত্তা ও দৃঢ় মনোবলের প্রতীকে পরিণত হন। তিনি গোটা সোভিয়েতে ব্রেগলোটস নামে খ্যাত।
জার্মানি বংশোদ্ভূত ব্রেগলোটস লেলিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় অধ্যয়ন করেন। অতঃপর তিনি ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। জীবনে দু'বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম বিয়ে হয়েছিলো বরিস করনিলোভের সাথে। এ সংসারে তার দু’টি মেয়ে সন্তান ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে উভয় মেয়েই মারা যায় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন নিকোলাই মলচেনভকে।
ব্রেগলোটস এর প্রথম স্বামীকে মিথ্যে এক অভিযোগে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। সে সময় স্ত্রী হিশেবে তাকেও বন্দি করা হয়েছিলো। তিনি সাত মাস বন্দি ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহার করা হয়েছিলো। সেসময়ের যাতনার কথা পরবর্তীতে তাঁর কবিতায় তিনি লিখেছন।
তিনি ১৯৪০ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি মূলত সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশ পায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে: The Out-of-the-way place (১৯৩২), Night (১৯৩৫), Journalists (১৯৩৪), and Grains (১৯৩৫), ব্রেগলোটস এর poems (১৯৩৪) এবং Uglich (১৯৩২) কাব্যগ্রন্থ দু’টি প্রখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিলো।
ব্রেগলোটস যে কারণে বিখ্যাত তা হচ্ছে, নাৎসি বাহিনির অবরোধের সময় টানা ৯০০ দিন তিনি রেডিও স্টেশনে আটকা ছিলেন। আর সেখানে তিনি প্রতিবাদী ও উদ্দীপনাপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করতেন। যা নগরবাসীদের মনোবলকে চাঙ্গা করতো। তারা সাহস পেতেন। যার ফলে তিনি গোটা শহরের নিকট পরিচিতি পান উদ্দীপনাপূর্ণ ও সাহসী বক্তব্যের প্রতীক হিশেবে। মানুষ ভয়ে থাকতো, ক্ষুধা ও চিকিৎসা অভাবে ভুগতো। আর সেখানে তিনি তাদের সাহস যোগাতেন। এসময়ের কবিতা, স্মৃতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার রচনাবলী হচ্ছে: February Dairy (১৯৪২), Leningrad poem (১৯৪২), In memory of defenders (১৯৪৫), Your way (১৯৪৫) ইত্যাদি।
তিনি সেই অবরোধ নিয়ে নাটক লিখেছেন। ভয়াবহ সে স্মৃতি নিয়ে স্মৃতিকথা The Day StarsI লিখেছিলেন। যা প্রকাশ পেয়েছিলো ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীতে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তার সেই স্মৃতিকথা চলচ্চিত্রায়ন হয়।
নিম্নোক্ত বাঙলায়ন কবিতা তিনটি পোয়েম হান্টার ডটকম থেকে চয়িত। কবিতা তিনটিতে লেলিনগ্রাদ অবরুদ্ধ থাকাকালীন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের বর্ণনা, আবার স্বাভাবিকতা ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে।]

১. প্রত্যাশা

এখনো আশা আছে যে আমার জীবনে ফিরতে পারবো
যথেষ্ট সৌভাগ্য, শুধু সকালে ঘুম থেকে জাগবো-
প্রত্যুষে, একবারের ঝলকানি এসব স্ফটিক শিশিরে-
যেখানে বৃক্ষশাখাগুলো দারুণ কিচিরমিচিরে ভরা থাকবে,

যেখানে সোনামাখা আলোকচ্ছটাগুলো  হ্রদের জলে ছড়িয়ে যাবে,
মেঘের চঞ্চল গতি প্রতিফলিত হবে,
আর ভদ্রভাবে আমার তরুণ অবয়বের সাথে যোগ হবে,
আশ্চর্য ও আশীর্বাদ মনে একটি ফোঁটা ধরে রাখবো,

আনন্দাশ্রু ঝরবে, আর সহজ হবে উপলব্ধি করতে,
যতদূর দেখতে চাবো, সব দূরত্ব দেখতে...
আর এখনো বিশ্বাস করি যে সেই সুন্দর সকালটি
ফিরে আসবে আমার নিকট নৈশব্দ ও আভা

আমার কাছে- মাধুকরের কাছে, আনন্দহীন বিজ্ঞ বিচরণে,
সুখী হতে সাহসী হবো না, কোমল ও অনুনয়ী হবো।

(প্রত্যাশা কবিতাটি HOPE শীর্ষক কবিতার বাঙলায়ন)

২.
আমরা উচ্চারণ করেছি

ওলগা বেরঘোলজ
আমরা উচ্চারণ করেছি
খুবই সাধারণ, নিচুমানের শব্দ
এমনটি যে, তারা কখনওই উচ্চারিত হয় নি।
আমরা বলতাম
ভানু, প্রভা, ঘাস
যেমন করে মানুষেরা উচ্চারণ করে
জীবন, ভালোবাসা, শক্তিমত্তা।
মনে করো, কিভাবে আমরা পরিষ্কার করেছি
সেই শাশ্বত, অভিশপ্ত তুষারপ্রবাহকে
শহরের রাস্তা থেকে- আর একজন বয়স্ক লোক
যে ফুটপাতের বিরুদ্ধে তার পা গেড়েছে,
চিৎকার করছে, ‘পিচ, বন্ধু, পিচ!’
যেনো সে অনেক আগে একজন পাটনি ছিলো,
উচ্চস্বরে ডাকছে, ‘ভূমি, ভূমি!’
(আমরা উচ্চারণ করেছি কবিতাটি WE PRONOUNCED শীর্ষক কবিতার বাঙলায়ন)

৩.
সেই পৃথিবীর নামে

সেই পৃথিবীর নামে, আমার প্রিয়,
একজন সর্বোত্তম এবং আমাদের জন্য একাকী,
এখানে আবার আমার প্রেমে পড়েছে,
আর একবারেই এগুলো আমাকে বলো।
সতর্ক হও! তুমি ঠিক মুহূর্তটি হারাতে পারো!
তাই ডাকো, অতীতের দিকে তাকিও না,
আমার প্রেমের অস্বাভাবিক বিশ্বাস
অহমিকা ও সুখকর বোঝা।
কখনওই তুমি ভাগ্যকে সুখকর পাবে না,
না উঁচু, নীলে গভীর ডুব,
কেননা এটি আমাদের শেষ ইচ্ছাতে আছে-
শেষ অনিলে দু’বার শ্বাস নেয়া।
(সেই পৃথিবীর নামে কবিতাটি IN THE NAME OF THAT WORLD নামক কবিতার বাঙলায়ন)



অলংকরণঃ তাইফ আদনান