জলধি / কবিতা / এমরান হাসানের কবিতাগুচ্ছ
Share:
এমরান হাসানের কবিতাগুচ্ছ

সজ্জিত স্বরধ্বনি
 

মেলে রাখি নিত্যবিত্তরূপ পুরোটা আকাশ।
তেরশ' নদীর জল আর উজ্জ্বল মাছেদের ঘ্রাণ |
পাঁজরে যার নিশ্চুপ ইতিহাসের প্রচ্ছন্ন ব-দ্বীপ
মেঘ আর অনির্বচনীয় রোদের ছায়াবাজি সারাবেলা।

বাউল জন্মের একরত্তি একতারা ভোরে
আঁচল খুঁড়ে পাঠ্য শোনো এইসব অমোঘ পঙ্কতি
সারা দুপুর, সন্ধ্যা, সমস্ত রাত |

কররেখায় চেনা সুবাস, সীমান্তে মহিমান্বিত বর্গমাইল।
ধলেশ্বরী, মেঘনার জলে
অসম্ভব-অস্থির-মেঘলা আকাশের ছায়ায়
পবিত্র বর্ষার ছবি যেমন বদলায়  শিল্পরূপে।
উদ্ধৃত তন্দ্রায় কেউ একা কেমন ছড়ায় বৈভব!

বিমুগ্ধ আলোর খুব কাছে এঁকে বিষন্ন জীবন
সরল সংসারে ধূসর স্পর্শের নীড়ে
দিয়ে যাচ্ছি অপার... অদ্ভুত স্বদেশ।

স্বদেশ সৌধ


এই তো চিহ্ন। এটুকুই।
থাকুক জলের আয়নায় লুকোনো মুখের শেষ তৈলচিত্র।

বিহার সোমপুর থেকে চর্যাপদ,নালন্দা থেকে আরশিনগর
কাহ্ন কিংবা জালন্ধরীপা'র ধ্যানপ্রস্থ আয়োজন
ভূগোলে-বিদ্রোহে এ এক বিস্মিত বিস্ময়ে জড়ানো মধ্যরাতে
প্রিয়ঙ্কর মুগ্ধতা ছড়ায় লালন সাঁইয়ের গান।
দ্বিজ ঈষাণের পুঁথি থেকে যতোটা দূরে আঁকো চম্পকনগর
চম্পাবতী,চন্দ্রাবতী'র মন্দিরে সাজাও সন্ধ্যা-আরতী
দাও তবে আঁচলে বেঁধে শস্যঘ্রাণের আকাশগন্ধী রাত
বৈচিত্রে থাকুক জেগে অনন্য রূপে স্বরূপ স্বাধীনতা।

বেহালার সুরে অবাক মেঠোপথে একা হেঁটে যাওয়া পায়ে
আকাশ কাঁপিয়ে উড়ে যায় পায়রাপ্রহর — যুগপ্রস্থ মুগ্ধতায়।
আমৃত্যু হাসিমুখে নেচে ওঠে প্রিয় প্রান্তিক মানুষের সংসারে
মুঠো মুঠো  রোদ্দুরে কেঁপে ওঠা দারুণ সাহসী শস্যগন্ধা ভোরে
বিপন্ন মানুষের আধপোড়া সানকিতে হিরন্ময়ী সুখে
মিশে থাকে স্বাধীনতা,কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর— ষোলই ডিসেম্বরে...

এই তো সাহস।এটুকুই।
ভাসুক চোখের আরশিতে অপরূপ সৌম সৌধ এক।

বাংলাদেশ-বিদীর্ণ আয়নায়



প্রণম্য ভালোবাসা জেনো ঘাসফুল শিরোনামে
নদীতীর যেমন ভাঙে জলের বসুধা কোমল আহবানে
যুদ্ধ-জলছাপ বুকে যেরকম অবাক বেঁচে থাকা
মানুষে- মানুষে আদি, অরুণরঙা ইতিহাস ভুলে জন্ম নেয়া
পথ-অপথের দীঘল নিনাদ।

আড়াল অক্ষরে পোড়ে পৌরাণিক বাংলাভূমি
দুখিনী মায়ের মতোন আঁচলাবৃত জলে স্নেহে-দীর্ঘশ্বাসে
মুর্ছনা মুছে যায় বীরাঙ্গনার; সাগ্নিক যোগীর যেরকম ভাঙে ঘোর প্রভুবেশে নামে মুক্তিসেনা,
অসূর নিধনে কটাক্ষ করে মুদ্রিত মোহের মায়াপথ,সুরম্য জীবন

স্মৃতির কোন ইতিকথা থাকে না জেনো।
ভেসে থাকে কেবলই জয়গান,
মুগ্ধ সময়ের বেশে সবশেষে নামে জ্যোৎস্নাপার্বন
পরম আধুলি যেমন আশ্চর্য রোদ্দুর দেখায়
জাদুঘরে থাকে শুয়ে সোনারঙা দিন।


অলংকরণঃ তাইফ আদনান