জলধি
/ কবিতা
/ আসমা চৌধুরীর তিনটি কবিতা
আসমা চৌধুরীর তিনটি কবিতা
কার কাছে সমুদ্র দিয়েছিলাম
এখন বসে বসে চূড়ান্ত ঝালাই করি
পেছনে ফিরি
কার কাছে সমুদ্র দিয়েছিলাম
কার কাছে ভ্রমণ
কে নিয়েছিলো সাদা মেঘ,কাশফুল
লক্ষীপেঁচার কোটর,
কে আমাকে দিগন্ত দেখাবে বলে পথ হারালো
বাড়ির পথে কয়েকটি রাস্তা চৌরাস্তা হয়েছিলো
ভেবে ঠিক করতে পারিনি কোন পথে যাবো।
এখন রাস্তাগুলো শাখা-প্রশাখায় মিলেছে
কাউকে চিনিনা, চেনা মানুষগুলো রক্তপাতে ভিজিয়েছে
কোনো মুখ শিখিয়েছে হাতুড়ি পেটা দুঃসহ মৃত নাম।
সারাদিন কেটে গেলে নিজেকে ছোট করে কাটি
কৌটায় ভরে ভাবি,কেউ আর দেখতে পাবে না
চাতুরির নৌকা গুলো নেমে গেলে জোয়ারে
সংখ্যা গুনতে ফের কেউ ডাকবে নিশ্চয়।
ফেরা
সেই কতকালের পুরানো চাপকলে পা ধুয়ে বাড়ি ফিরছি
কেন যে ধূলার পথ অতটা হেঁটে এলাম
বাড়ির মসজিদের অন্যপাশে কবরস্থান,
কামিনীফুলের গাছ।
ঘাট বাধানো পুকুর;ঝুঁকে পড়া আমগাছ।
কেউ ছুটে আসছে না কেন?তবে কি আজ মঙ্গলবার?
হাটে গেল সবাই?মেয়েরা ভেতরে পাখা সেলাই করছে?
কেউ মারা গেলে বাড়িটা নিঃশব্দ হয়
লোটন ফুফুর মৃত্যুতে বাড়ির মানুষেরা
অনেকদিন শব্দ করেনি।
শহর থেকে ভাবীর লাশ নিয়ে আমরা বাড়ি পৌঁছেছিলাম,
বাড়ি নয় যেন বাড়ির কবর স্থানেই ফিরে আসা।
এই যে আমি জীবিত ফিরে এলাম
কেউ দেখতে পাচ্ছে না কেন?
কড়া নাড়ছি,খুলুন,খুলুন...
বাড়িটাই কী নেই আর!
ফিরে যাওয়া বলে কোথাও সঠিক ঠিকানা নেই
যে পথ হারিয়ে গেছে
তার বুকে যত ঝরাপাতা গান হোক
কেউ রাখবে না পুরানো ঠিকানা
দূর থেকে ছবিগুলো সবুজ,হলুদে মিলে
পুনরায় ডাক দিয়ে বলে
যে পা ধুলোর ছাপ মুছে,শহর চিনেছে
সে আর কার কাছে যাবে!
ছবির মতন আজো সন্ধ্যা নামে
চাঁদ ওঠে খালপারে ছোট ঢেউ ঢেকে
সুপারির খোলে হাসে আলোভরা মাথা খোলা কলি
কত সহজেই মানুষের মন ভাঙে,ভুলে ভরা স্মৃতি;
যত ইচ্ছে খেলা পাকা ধানের মতো মানিয়ে যায় বুকে
আসছে বর্ষায় পাটের আঁশের বুনো গন্ধ মনে রেখে
আমাদের গ্রামের পথ, জুতো খোলা জল-কাদা মাটি
কলমির পাতা ছুঁয়ে একটি সবুজ টিয়া আঁকা দিনগুলি
ফিরে যাওয়া বলে কোথাও সঠিক ঠিকানা নেই
বাঁশের মাচায় থাকে, লুকানো দীর্ঘশ্বাসের ছবি...
অলংকরণঃ তাইফ আদনান