জলধি
/ কবিতা
/ আসমা চৌধুরীর তিনটি কবিতা
আসমা চৌধুরীর তিনটি কবিতা
বিরহ
মানুষের সাড়া পেলে
অন্ধকার আকাশও নড়ে ওঠে
ইশারায় ভেসে যায় পদ্মার ঢেউ
সাঁকোর রেলিং ছুঁয়ে একটু বাতাস
মাঝখানে কে যেন একা একা হাঁটে।
বিরহের গানগুলো কাছে রেখে ঘুম
মকিম বাইদ্দ্যার ঢোলে সাপ খেলা আনে
লখাইয়ের লগে চলে অবাধ খুনসুটি
কে যেন কেড়ে নেয় কালো কাজল চোখ।
সারাদিন সেই তো এক অবাধ শূন্যতা
গলা ধরে বসে থাকে বহুরূপী শ্যাম
সখীরে সুখের পাঞ্জা বিঁধিয়ে দরজি
কেটে নেয় বিরতির মধুর শপথ।
এতই একলা লাগে দিনভর খোঁজা
ফাঁদ পেতে তুলে নেয়া হিসেবের মাঠা
কে যায় গোকুলের মাঠে,এইবেলা রাধা?
তুমি নিরাময় হলে
তুমি নিরাময় হলে একদিন আমাকে লিখো
সবুজ পাতার গল্পে,শাখার ধরে রাখা পাখির বাসায়
মেঘ বিকেলে শান্ত ঝাউবনে বাতাস পাখায়
তুমি নিরাময় হলে সত্যি আমাকে লিখো
পাথর থেকে যেভাবে আলো ছড়ায় রোদ্দুর
পাহাড়ের ওপাশে যেভাবে লুকায় সূর্য
মন কাঙালের শোকগুলো যেভাবে বৃষ্টি হয়
মানুষের একা একটা দিন যেভাবে ডুবে যায়
লিখো,কীভাবে ছিঁড়ে যায় নাড়ীর বন্ধন
বন্ধু হারানোর দীর্ঘশ্বাস।
একদিন পিঠে রেখে পথের দিঘল দেহ
দৃষ্টিতে দুর্বিষহ আগুন,আমিও জেনেছি
কত রকম ঈর্ষার তেজ ঈশ্বর হয়ে ওঠে
হিসেবে কাজ করে জেগে ওঠা মুখ
নতুন চরের মতো পেলব আশার হাতছানি
ভাবতে শেখায়,নামগুলো পরস্পরকে বলে
দেখ সবকিছুই মুহূর্তের ভুল।
তুমি নিরাময় হলে জোড়া দিব ছোট ছোট সুখ।
সেই মুখ
সব চিঠি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না
সব মানুষের ঠিকানা থাকে না
যারা হারিয়ে যায়,
ঐ ক্রিকেট খেলা লম্বা ছেলেটি
খুব চঞ্চল ছটফট,সময় নেই বলা ছেলেটি
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে এসে বলে,
কী আশ্চর্য, তুমি দারুণ একটা মেয়ে।
আর সেই সাদা প্যান্ট পরা শুভ্র ছেলেটি
কলেজের অনাহুত ভীড়ে চোখে পড়ে
লুকিয়ে দেখা। কত সবুজ বৃষ্টির ঘোর
জানা যায় একটা ক্লাস ওপরে পড়ছি
বয়সে ছোট বলে দূরে চলে গেলো
এখনও এমন কাউকে দেখি,খুব জানতে চাই
কী খুঁজতে তুমি?এখনোও কী সেই তুমি আছো?
কপালের ওপরে হাত রাখি,ফাঁকা হয়ে গেছে চুল
সাদা দাগ লেগে জানিয়ে দিচ্ছে বয়সের ডানা
উড়ে যাচ্ছে মনের আদল,পেখমের রং।
কখনো সময় পেলে বলবো,সত্যি কী কেউ হারিয়ে যায়?
কোন মুখ মনে করে এখনো জ্যোৎস্নায় ডুবে থাকা যায়...
অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন