জলধি / কবিতা / আতিদ তূর্যের তিনটি কবিতা
Share:
আতিদ তূর্যের তিনটি কবিতা
জিরাফ

 

জিরাফ জাগছে জিরাফ

অভিমানী জিরাফ— মুখচোরা জিরাফ

শক্তকথায় চোখ ছলছল করে

ভালোবাসা পেলে মাথা নোয়ায়

গাছেরা ওকে আড়াল দিতে পারে না

জিরাফ কোনো ছদ্মবেশ জানে না

উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সকাল-সন্ধ্যা 

আহ্বান পেলে চোখবুঁজে শুষে নেয় আদর।

শত্রুরা মরণফাঁদ পেতে রেখেছে, জিরাফ জানে না

হন্তারক রেকি করে গেছে, জিরাফ জানে না।

জিরাফ বড়ো একা, তার সমমনা কেউ নেই

জিরাফ বড়ো নাজুক, কোথাও লুকোতে পারে না।


ওয়াক ডাউন মেমোরি লেন

 

মেমোরি লেন ধরে এগোলে

একটু পর পর ইউটার্ন

ডাবল ডেকার নস্টালজিয়ায়

কবেকার বুড়ির বাগান।

তেঁতুলগাছে পিশাচ থাকে জনশ্রুতি 

খাটাশের অন্যনাম গন্ধগোকুল কবে জেনেছি?

পায়রার খোপে লালচে পালক

ক্যারামঘরে জটলা, কিল-ঘুষি

নগ্ন যুগলকে প্রহার করছে গ্রামবাসী।

মাংসের গায়ে ঈশ্বরের নাম

খেলা কখন কাল?

ছাগল খাসি করা দেখবি চল্।

মসজিদ মাইকে রাতদুপুরে হুলস্থুল 

বিলের ধারে চারটি লাশ

বছর ঘুরে বাড়ির পথে কাওরা

 

পানাপুকুর সারিয়ে তুলছে অসুখ রাতারাতি।


ভোর  

 

"আলো ক্রমে আসিতেছে

এ নভোমণ্ডল মুক্তোফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ"

— কমলকুমার মজুমদার 

 

শহরে দীর্ঘদিন কোনো মোরগ নেই। কৃষ্ণচূড়া কমে গিয়ে বাঁদরলাঠি বাড়ছে। আমাদের অভিশপ্ত রাতজাগা চোখ শিকার খোঁজে। রাতভর ফাতনা নিয়ে খেলছে এক দস্যি মাছ। মাছের কোনো ক্লান্তি নেই, বড়শিওয়ালা পরিশ্রান্ত। কি করা যায় এখন? ঘরে নরম আলো ঢুকছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরা যায়। কেমন ইয়াতিমের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছো তুমি। মনে হচ্ছে আমারই নাবালিকা  কন্যা। তলপেটের প্রাগৈতিহাসিক ব্যথাটা বাড়ছে। আলো-আঁধারির এমন প্রভাতে মৃত্যু এক চমৎকার ইমেজ। কি থাকে মৃত্যুর পরে? প্যানডোরার বাক্স? ডোপামিন ডিটক্সের চেয়ে সুইসাইড করা সহজ। চোখের সামনে রিল চলছে। সারি সারি কাঁচের বোতল গড়িয়ে পড়ছে আসমান থেকে। একজন মানুষ গগনবিদারী শব্দ করে একথাল খাবার খাচ্ছে। বেদনার করুণ সুর বেজেই চলেছে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে অর্ধেক দিন কাটিয়ে দিতেন ফেসবুক যুদ্ধ করে। মহাজাগতিক এক ভোরের মুখোমুখি বসে আছে একজন বহিরাগত।



অলংকরণঃ তাইফ আদনান