জলধি / কবিতা / আকলিমা আঁখির তিনটি কবিতা
Share:
আকলিমা আঁখির তিনটি কবিতা
অনিবার্য নিয়তি
সিন্ধু নদীর প্রাচীন তৃষ্ণা নিয়ে জেগে আছ তুমি যেন সিন্ধু  সভ্যতার প্রত্নলিপি।খরা,বন্যা বা মহাপ্লাবনের  ধ্বংস বুকে নিয়ে জেগে থাকা হরপ্পা কিংবা মহেঞ্জোদারো। নগর সভ্যতার  শৌর্য দিয়ে দীর্ঘ বাহুডোরে বাঁধো চির সবুজ বঙ্গ জনপদ।অতল চোখের নদীতে ভাসাও বঙ্গোপসাগরের সাম্পান।সিন্ধু বীর্যের ফসলভারে বিস্মিত ব্রহ্মপুত্রের জলে তৃষ্ণা বাড়ে চরে জাগাতে সুশোভিত কাশফুল সমেত ফলজ উদ্যান।প্রকৃতির নিষ্ঠুর করাল গ্রাসে বিনাশী সভ্যতার শোকে বঙ্গ জনপদের সবুজ বনে বাজে হলুদপাতার করুণ বাঁশি
যেন ঝরেপরার বিনাশই তার অনিবার্য নিয়তি।

ভাঙনের শহর
হেডাম থাকলে ভাঙন ঠেকাও-
ঝাউ পাতার আগুনে তুমি পোড়া খিচুড়ি;
অসুরের গদায় টুকরো টুকরো তুমি, হে সুন্দরী;
রক্তজলে নিম্নাঙ্গ তোমার হৃদয় বাঁচাও,
হেডাম থাকলে ভাঙন ঠেকাও।
 
ঢেউয়ের জ্বিবের ডগায় ভাসে জল হাঙরের লালা;
ডাঙায় কুমিরের তা দেওয়া ডিম ফুটার পালা 
আর তুমি পুড়াই নাজিরারটেক শুটকি মহল!
মাচায় তোমার নিরীহ দু'পায়া মাছে লক ডিগডিগ;
বেসুরা মাছিরা গলা মেলায় ঠিক ঠিক।
মাথিনের কূপে বন্দি তুমি নিজের দিকে একটু তাকাও,
আরে হেডাম থাকলে ভাঙন ঠেকাও।
 
গুটিখেলে গুটিবাজ চালান গুটি-
জিওব্যাগ বন্দি বালুজীবন কাঁধে হাঁটো গুটিগুটি।
জিঞ্জিরপায়ে জিঞ্জিরা দ্বীপ খায় হাবুডুবু,
হিমছড়ি কয় হিমালয় কে?আমিই সবার উঁচু!    
মহেশখাইল্লা পানেরবরজ তার আবার কিসের গরজ! 
বহুতল কলাতলী সময় বুঝে দেয় অপ্সরী সাজ,
মালেকা বানুর শহরে রাত ফুরোলে জীবন ফাউ।
হেডাম থাকলে ভাঙন ঠেকাও।
 
ঝাপসা চোখের বিজ্ঞ বাতিঘর ত্রাসের ঝাণ্ডা উড়ায় সবল হাতে,
মুক্তাভরা ঝিনুক কাটে কাঁকড়া পায়ের সাঁড়াশিতে।
নিরীহ ঝাউয়ের হৃদয় ছিড়ে কোঁচের ডগার শক্ত ঘায়ে।
নেকড়ে দলের লেজ নাড়নে বাঘ মিয়াসাব বিড়াল বনে লইট্টা মাছের হাড় চিবিয়ে!
তুমিইতো এক আজব সাগর বাঁচো অসংখ্য অক্টোপাসের ক্যামোফ্লাজে,
বিছাতারার রূপ দেখিয়ে বিষ ছড়াচ্ছ সকল শ্রেণীর ভাঁজে ভাঁজে। 
শক্তিঝড়ে ঠেকিয়ে-ঠকিয়ে তুললে না হয় জোয়ারের ঢেউ,
যখন ভাটার টানে ভাসবে সবি তখন দেখবে আপন বলতে নাইরে কেউ।
এখনও সিডর সামলে বেঁচে আছে তোমার বুকে ধুকে ধুকে দু'একটা অটল ঝাউ।
হেডাম থাকলে ভাঙন ঠেকাও। 

মানুষের দায়
উষ্ণ হতে হতে মোমের মত গলছে পৃথিবী;
আবার জমে জমে বরফও হচ্ছে কোথাও!
আতেল কাণ্ডকারখানায় অস্থির প্রকৃতি;
মানুষ, তাহলে তুমি কিভাবে থাকবে সুস্থির!
সাবধান মানুষ, 
তোমাদের পোশাকি সভ্যতা আজ ম্রিয়মান!
তাপদাহে ইউরোপ নগ্নপ্রায়
আর আমেরিকা প্রায়শই থাকে শীতল আইসিইউতে।
এশিয়াজুড়ে চলছে বন্যা উৎসব;
স্থানে স্থানে অহেতুক ডুব সাঁতার।
খরা আর ক্ষুধা বুকে নিয়ে ধুকছে আফ্রিকা;
অ্যামাজন কিংবা অস্ট্রেলিয়া পুড়ছে  দাবানলে–কার দায়ে?
বল মানুষ,কার দায়ে!???
 
টের পাচ্ছ কী?
পৃথিবীর পঁচে যাওয়া হৃদয়ের আর্তনাদ;
ধর্ষিতা কিশোরীর মত তড়পাচ্ছে।
যে অপরাধ বা পাপের শাস্তি বয়ে বেড়াচ্ছ
তোমাদের মন ও মগজে;শতছিদ্র ফুসফুস নিয়ে
পৃথিবী ধুকছে তীব্রজ্বরের উত্তাপে–
মানুষের দায়ে।
হ্যাঁ,শুধুই মানুষের পাপের দায়ে।
 
পৃথিবীর সন্তান হয়ে কি করে ভুলে থাকি
স্বজাতির পাপ–
কাঁধে তুলে নিয়ে যত দায়,
সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা সঙ্গীত গাই;
বাঁচতে ও বাঁচাতে নিষ্পাপ পৃথিবীর থেকে অভিশাপ।     


অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন