জলধি / কবিতা / অনঞ্জন এর পাঁচটি কবিতা
Share:
অনঞ্জন এর পাঁচটি কবিতা
খোলা হাওয়ারও একটা পাল লাগে

 

খোলা হাওয়ারও একটা পাল লাগে

উজাড় করে দিতে,

সবাই তো আর ডুবতে পারেনা।

 

বদ্ধ পাগলামিও স্নিগ্ধতা খোঁজে,

নইলে একলাবেলা

বাঁধ ভাঙতে তীক্ষ্ণশোক লাগেনা।

 

তোমার বৃষ্টিতে স্নিগ্ধতা ভরা

মায়াবী আলো ছিল,

যত ডুবি ততই দহন বাজে।

 

শেষ নিঃশ্বাসও বেরোতে হয় রাজী,

যদি একটিবার বল

আমার স্পর্শে সুখের কণা সাজে।


স্বৈরিণী তুই

 

স্বৈরিণী তুই সকালবেলার হিয়া

স্বৈরিণী তুই পালিয়ে থাকা প্রিয়া

স্বৈরিণী তুই জলের শব্দে গান

স্বৈরিণী তুই অনঙ্গ-তেজী বাণ

স্বৈরিণী তুই হাওয়ার শব্দে বাঁচিস

স্বৈরিণী তুই মালী-কে বেঁধে রাখিস

স্বৈরিণী তুই টুপটাপ ঘনঘোর

স্বৈরিণী তুই আকাশ নিয়েছে মোড়

স্বৈরিণী তুই দুপুরবেলার আড়ি

স্বৈরিণী তুই মেঘলা বিকেল ভারী

স্বৈরিণী তুই অবিশ্রান্ত বেণী

স্বৈরিণী তুই অপাপবিদ্ধ যোনী

স্বৈরিণী তুই জলজ্যোৎস্নার আতর

স্বৈরিণী তুই ছলকে করিস কাতর 

স্বৈরিণী তুই নিশিপ্রান্তে বাস

স্বৈরিণী তুই টা...না সর্বনাশ


আলোকতৃষ্ণা

 

তুমি কি সেই ব্যস্তই আছো?

আগের মতোই...

অপেক্ষা আমি অভ্যেস করে

ফেলেছি, কবেই।

আলোর সমুদ্রে তোমার উচ্ছল

জলকেলি মুগ্ধ করে,

আঁধারে জোছনা রাঙানো তোমার

দৃষ্টিপাত তৃষ্ণাহরা!

 

তাই...

দিনগত পাপক্ষয়ের ফাঁকে যখনই

আলোকতৃষ্ণা পায়

চোখ তুলে দেখি তোমাকে, তীক্ষ্ণ, সুন্দর,

বুক ভরে মাখি,

অপেক্ষা করি ব্রহ্ম মুহূর্তের,

স্নিগ্ধতার ঝলকানি

কালের বুক চিরে নেমে আসে,

যা আমায় শান্তি দেয়।


মুহূর্তের অসীম

 

মুহূর্তকে অনন্যোপায় করে ছুটে চলে খোলা হাওয়ারা

অসহায় মুহূর্ত বিহ্বল হয়ে থাকে

খোলা হাওয়ার ছোঁয়ায় সে নিষ্পলক মুহূর্তের বিস্তার,

খুব বৃষ্টি এলো হঠাৎ,

একাকার মেঘ তাকে থামায়, শিহরণ টেনে নিয়ে চলে!

 

খোলা হাওয়ার দোষই ওই, সব এলোমেলো করে দেয়

গুছিয়ে রাখা জামা-কাপড়, গুছিয়ে রাখা বিছানার চাদর

এমনকি গুছিয়ে রাখা সংসার!

 

সে  আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়

তারপর

আস্তে আস্তে তলিয়ে যায় সেই বিহ্বল মুহূর্তের অসীমে।


সে ধরা পড়ে যায়

 

চোখে চোখ রেখে গন্ধরাজের স্মৃতি সে উজাড় করে দেয়

এই আশায় –

কলহাস্যের নীচে ওই গভীরের প্রবল-শূন্যটুকু ধরা দেবে,

ধরা দেবে শ্রাবণ থেকে ছলকে আসা দীর্ঘশ্বাস আশ্বিনের গায়

ধরা দেবে তার সমস্ত অনাঘ্রাত ঘ্রাণ, এই শেষ বিকেলে,

ধরা সে সত্যিই দেয়;

একলা এলোমেলো হয়ে যাওয়া ওষ্ঠ আর অধরকে এক করার

আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে তার সমস্ত-বিহ্বল অশ্রু হয়ে যায়,

তার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রুরা স্বাধীন হতে থাকে

এক আকাঙ্ক্ষিত করতলে,

 

সে ধরা পড়ে যায়!



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন